কালান্তক ঘূর্ণিঝড় আম্পান কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলাকে তছনছ করে চলে যাওয়ার ৪ দিন পরেও সারা কলকাতা একটা যেন ধ্বংসস্তুপের ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চতুর্দিকে ভাঙা গাছ, এখনও রাস্তা পরিষ্কার করা যায়নি। আলোর স্তম্ভ, টেলিফোনের খুঁটি, কেবলের খুঁটি, উপড়ে পড়ে রয়েছে। একটা ধরে টানতে গেলে আরও পাঁচটা জিনিস জট পাকিয়ে যায়।
এ রকম অবস্থায় ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন বা সিইএসসি, যারা কলকাতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষৎ, যারা কলকাতার বাইরে রাজ্যের বাকি জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, দমকল বাহিনী, কলকাতা পুরসভা, প্রত্যেকেই সময়ের সঙ্গে লড়াই করে ক্লান্ত হয়ে উঠছে, কিন্তু এই বিপুল বিপর্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। চতুর্দিকে মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। চার-পাঁচ দিন হয়ে গেল আলো নেই, জল নেই, টেলিফোন নেই, মোবাইল টাওয়ার নেই, ইন্টারনেট কানেকশন নেই, মানুষ বিপর্যস্ত একটা অবস্থায় বাস করছে। শেষপর্যন্ত নিরুপায় হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সেনাবাহিনীর সাহায্য চান।
তার আগে অবশ্য ন্যাশনাল ডিজাস্টার ফোর্স জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এ রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে এবং কাজ শুরু করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধে কাল সন্ধ্যায় কলকাতার ইস্টার্ন কমান্ড থেকে ৫ কলাম সৈন্য পাঠানো হয়। কলকাতা এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে তারা রাতেই কাজে নেমে পড়ে। অনেক রাত অবধি কাজ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে রবিবার সকালে তারা দক্ষিণ কলকাতা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভেঙে পড়া গাছ, উপড়ে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি, এইসব সরানো এবং যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করার কাজে তারা ব্যস্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে আরও বেশ কিছু জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও বলেছেন, তাঁর রাজ্যের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাঁচশো সদস্যকে তিনি পশ্চিমবঙ্গে পাঠাচ্ছেন। এদিকে ধীরে ধীরে কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে, জল এসেছে, অল্প অল্প করে মোবাইল সংযোগ হচ্ছে। রাস্তাঘাট যদিও এখনও সব জায়গায় পরিষ্কার করা যায়নি, তা করতে করতে নিদেনপক্ষে মঙ্গলবার হয়ে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, কিন্তু এরই মধ্যে আগামীকাল ঈদ ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে। কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম ঘোষণা করেছেন যে আগামীকাল সোমবার ২৫শে মে এখানে ঈদ পালন করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সকলেই যেন ঘরে বসে ঈদের নামাজ পড়েন এবং পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ পালন করেন। আমিও আমাদের শ্রোতাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন। ঈদ মোবারক।