আলোকিত জীবন

বর্তমানে পৃথিবীতে ২০ লাখেরও বেশি নারী ফিস্টুলা রোগে ভুগছেন

হাজার বছর আগে বুখারার বিখ্যাত চিকিতসাশাস্ত্রবিদ আল-আসুলি চিকিতসা বিজ্ঞানকে দুই ভাগে ব্যাখ্যা করেছিলেন, "ডিসিসেস অফ দ্যা রিচ" এবং "দ্যা ডিসিসেস অফ দ্যা পুওর"। এখন তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো মানুষের ÿত ও বেদনার কথা লিখতেন। ফিস্টুলা হলো একটি নারীর, একটি মায়ের হত দরিদ্র জীবনের এবং সামাজিক ও পারিবারিক অবমূল্যায়নের সাক্ষী।

লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর পারে ছোট একটি গ্রামে তুরতুরী বেগমের বসবাস। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে এবং একই বছরে গর্ভবতী হলেন তুরতুরী। মা হওয়ার অনাকাঙ্খিত স্বপ্নে আবিষ্ট তুরতুরীর গর্ভকালীন কোন পরিচর্যার কথা জানা ছিল না। অবশেষে ২ দিন ধরে বাড়ীতে অসহনীয় প্রসব কষ্টের পর একটি মৃত সন্তান প্রসব করে তুরতুরী। প্রসবের ৪ দিন পর হঠাত তুরতুরী আবিষ্কার করে তার পরনের কাপড় ভিজে যাচ্ছে, তার গায়ে প্রস্রাবের দুর্গন্ধ, তার প্রস্রাবের কোন বেগ হয় না।

তুরতুরীর বয়স এখন ৫৩ বছর। চল্লিশ বছর ধরে হত দরিদ্র তুরতুরীর চিকিতসা সহায়তা সর্ম্পকে কোন তথ্য জানা ছিল না। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত ল্যাম্ব হাসপাতালে ইউএসএআইডির আর্থিক সহায়তায় এনজেন্ডার হেলথ কর্তৃক পরিচালিত, ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনামূল্যে ফিস্টুলা রোগীদের চিকিতসা ও পুর্নবাসন সেবা দেয়। এক স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তায় তুরতুরী বেগম সইে হাসপাতালে ৪০ মিনিটের একটি ছোট অপারেশন করে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কেমন আছেন এখন ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অশ্রম্নসজল চোখে তুরতুরী বলেন, " এই ৪০ মিনিটের চিকিতসা আমার ৪০ বছরের চোখের পানি মুইচ্ছা দিল। আমি নতুন জীবন ফিরা পাইলাম।"

ফিস্টুলা হলো মহিলাদের মাসিকের রাস্তার সাথে প্রস্রাবের রাস্তা বা মলাশয়ের সাথে এক বা একাধিক ছিদ্রের মাধ্যমে সংযোগ। যার ফলে মহিলাদের মাসিকের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্রস্রাব বা পায়খানা বা উভয়ই ঝরতে থাকে। সাধারণত দীর্ঘ এবং বাধাগ্রস্থ প্রসবের ফলে এ সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে পৃথিবীতে ২০ লাখেরও বেশী নারী ফিস্টুলা রোগে ভুগছেন। মূলতঃ আফ্রিকা ও এশিয়ার ৫০ টিরও বেশী দেশে ফিস্টুলা আক্রান্ত রোগী বেশী লক্ষ্য করা যায়। জরিপমতে, বাংলাদেশে ৭১,০০০ হাজারেরও বেশী মহিলা ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত এবং প্রতিবছর প্রায় ২০০০ হাজার নতুন রোগী যোগ হচ্ছে। ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রজেক্ট -এনজেন্ডার হেলথ, ইউএসএআইডির আর্থিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ল্যাম্ব, কুমুদিনী, আদ্‌-দ্বীন ও কিছু প্রাইভেট হাসপাতালে বিনামূল্যে ফিস্টুলা রোগের চিকিতসা ও পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত দশটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ফিস্টুলা রোগের চিকিতসা প্রদান করা হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় প্রত্যেক জেলা সদর হাসপাতালে একটি "ফিস্টুলা কর্ণার" স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নারীর ÿমতায়ন ও মূল্যবোধ নিশ্চিত করা, পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতির চাহিদা নিরূপণ করা এবং মাঠ পর্যায়ে ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দÿ সেবাদানকারীর সাহায্যে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে "ফিস্টুলা মুক্ত বাংলাদেশ" গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

ডা: ফারহানা আখতার

সিনিয়র প্রোগাম অফিসার

ফিস্টুলা কেয়ার পস্নাস প্রজেক্ট

এনজেন্ডার হেলথ্‌ বাংলাদেশ