ইউরোপে আগে থেকেই অনেক ধরণের সংকট রয়েছে, তার উপরে বর্তমানে কভিড মহামারীর মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন না থাকার জন্য সেখানে এক বিশেষ সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে টিকাদান অনেক পিছিয়ে রয়েছে, এবং ভ্যাকসিনের ক্রয় ও বিতরণে বিলম্বের কারণে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে বুধবার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন টিকা সম্পর্কিত তার মতামতগুলি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে লন্ডন থেকে ভয়েস অফ আমেরিকার সংবাদদাতা হেনরি রিজওয়েল (Henry Ridgwell) তার এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একাধিক দিক থেকে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
সোমবার ১০৫ বছর বয়সী এলিজাবেথ স্টুবেস্যান্ড নিজের শহর কোলোনে ভ্যাকসিন নিতে যাওয়ার সময় বলেন, “এই টিকা খুবই ভাল এবং যদিও আমি বুড়ো হয়েছি, তাও আমি এই টিকা নিচ্ছি, এবং আমার ইচ্ছা অনেক, অনেক লোক এই টিকা নেবে”।অনেক ইউরোপীয়রা এই ভ্যাকসিন নিতে চাইছে, তবে সরবরাহের ঘাটতির এক প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই ভ্যাকসিন বিতরণ এবং মানুষের শরীরে এর প্রয়োগ হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে, এবং এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক রাজনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি এসে দাড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে, প্রথম ভ্যাকসিনের ডোজ যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ এবং ব্রিটেনে ১৭ শতাংশের তুলনায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশেরও নিচে মানুষদের এই টীকা দেওয়া হয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ম্যাট বেভিংটন বলেন,“আপনি বলতে পারেন যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির সাথে সমঝোতা চুক্তি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি, কিন্তু যখন অনুমোদনের বিষয়টি আসে,তখন কিন্ত এটি একটি সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল। তারা জানত যে, এটি প্রক্রিয়া খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে এবং তারা এটাও জানত যে, এরপরে এই ভ্যাকসিন গুলি বাজারে চালু হওয়ার সময় এটির উপর যথেষ্ট প্রভাব পড়বে, এবং আরও বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেহেতু ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে একটা নয়, বিভিন্ন সংস্থা যুক্ত রয়েছে, এই ধরণের সমস্যা যে হবে তা আগে থেকেই প্রচার করা হয়েছিল”।
ইউরোপে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী ওষুধ সংস্থাগুলি বিদেশে তাদের ভ্যাকসিন পাঠানোর আগে যাতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে, সেটা নিশ্চিত করতে, ব্রাসেলস রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বুধবার ইইউ আইনবিদদের কাছে গিয়ে এই কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন স্বীকার করেছেন যে, ভুল হয়েছে। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেন, “আমাদের অনুমোদন দিতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। যখন এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন বিশাল সংখ্যায় করা হচ্ছিল, তখন আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম এবং আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, আমরা যে সংখ্যায় সরবরাহের আদেশ দিয়েছি তা আসলে সময়মতো পৌঁছে দেওয়া হবে”।
এই দ্বন্দ্ব অবশ্যই এড়ানো যেতে পারে, তবে ইইউ কমিশনের প্রতি সমালোচনা ক্রমশঃ জোরালো হচ্ছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে ভ্যাকসিন রফতানি রোধ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের হুমকি, লন্ডন এবং ডাবলিন থেকে সমালোচনা প্ররোচিত করেছে।
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেন, “এটা করা ঠিকই ছিল, কেননা আমরা ইউরোপীয়রা সম্মিলিতভাবে ভ্যাকসিন অর্ডার দিয়েছিলাম। আমি ভাবতেও পারি নি যে, বড় বড় সদস্য দেশগুলি সমস্ত ভ্যাকসিন নিয়ে নেবে আর অন্য সবাইকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।। এরকম যদি হয়, তাহলে আমাদের ইউরোপীয় বাজার এবং ইউরোপের সব দেশের মধ্যে একতা কোথায়”?
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ইউরোপের টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়িয়ে তুলতে পারলে সম্ভবত ইইউর প্রতি এই সমালোচনার অবসান হবে।
Your browser doesn’t support HTML5