আঙ্গুর নাহার মন্টি
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় - ইউএসএআইডি ও ভয়েস অফ আমেরিকা
১৯ নভেম্বর ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘খোলা জায়গায় মলত্যাগ নয়’। আমরা তথাকথিত সভ্য সমাজের বাসিন্দারা এমন একটি দিবসের কথা শুনে চোখ কপালে তুললেও বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আর ১দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করছে। ফলে, মানুষ বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) সর্বশেষ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ডব্লিউটিও ২০০১ সালে সিঙ্গাপুর সম্মেলনে ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাচঁ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে ডায়রিয়া অন্যতম প্রধান কারণ। অথচ একটু সচেতনতায় এই মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার আগের তুলনায় কমলেও প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে ৫৩ জন শিশু মারা যাচ্ছে। আর এই মৃত্যুর ৭ শতাংশই ডায়রিয়াজনিত কারণে। তবে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু রোধে বাংলাদেশের সাফল্যও রয়েছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০০৭ ও ২০১১ তুলনা করে দেখা গেছে, ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু ২০ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ ব্যাপারে এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টের (এনএইচএসডিপি) প্রধান ড. হালিদা হানুম আখতার বলেন, বাংলাদেশ ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে, ২০৩৫ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে ইউএসএআইডি ও ইউনিসেফ ১৭০টি দেশের সরকারকে সহযোগিতা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ড. হালিদা জানান, বাংলাদেশে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে এনএইচএসডিপি কার্যক্রমের আওতায় ২৬টি এনজিও’র মাধ্যমে ৩২৭টি ক্লিনিক এবং নয় হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে বছরে ২৬ লাখ শিশুকে ডায়রিয়ায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়রিয়া প্রতিরোধে শিশুকে নিয়ম মেনে শালদুধসহ মায়ের দুধ, স্বাভাবিক খাবার, শিশুর পায়খানা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানায় ফেলা, হামের টিকা দেওয়া, পায়খানা ব্যবহার ও খাওয়ার আগে ও পরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং জিংক খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে লবন ও পানি জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে শিশু মারাও যায়। তাই বেশি করে তরল খাবার (খাবার স্যালাইন, ভাতের মাড়, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি), বুকের দুধ ও স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে এবং পাতলা পায়খানা না কমলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
আমি যখন এ তথ্যগুলো জানাচ্ছি-এটুকু সময়ের মধ্যেই বিশ্বে ডায়রিয়ায় এক বা একাধিক শিশু মারা গেছে। এই শিশুরা হতে পারে কোন বাংলাদেশী মায়ের অথবা আফ্রিকা কিংবা তৃতীয় বিশ্বের কোনো একটি দেশের। অভাগা শিশুরা যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধাবঞ্চিত অসচ্ছল পরিবারের সন্তান এতে কোন সন্দেহ নেই। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্ব বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, উন্নত স্যানিটেশন ও স্যুয়ারেজ পদ্ধতি আর সবার জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক সুশিক্ষা নিশ্চিত করে ডায়রিয়ার মতো অভিশাপ থেকে বেঁচে গেছে। আজ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ অভিশাপমুক্ত হতে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় - ইউএসএআইডি ও ভয়েস অফ আমেরিকা
১৯ নভেম্বর ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘খোলা জায়গায় মলত্যাগ নয়’। আমরা তথাকথিত সভ্য সমাজের বাসিন্দারা এমন একটি দিবসের কথা শুনে চোখ কপালে তুললেও বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আর ১দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করছে। ফলে, মানুষ বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) সর্বশেষ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ডব্লিউটিও ২০০১ সালে সিঙ্গাপুর সম্মেলনে ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাচঁ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে ডায়রিয়া অন্যতম প্রধান কারণ। অথচ একটু সচেতনতায় এই মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার আগের তুলনায় কমলেও প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে ৫৩ জন শিশু মারা যাচ্ছে। আর এই মৃত্যুর ৭ শতাংশই ডায়রিয়াজনিত কারণে। তবে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু রোধে বাংলাদেশের সাফল্যও রয়েছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০০৭ ও ২০১১ তুলনা করে দেখা গেছে, ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু ২০ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ ব্যাপারে এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টের (এনএইচএসডিপি) প্রধান ড. হালিদা হানুম আখতার বলেন, বাংলাদেশ ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে, ২০৩৫ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে ইউএসএআইডি ও ইউনিসেফ ১৭০টি দেশের সরকারকে সহযোগিতা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ড. হালিদা জানান, বাংলাদেশে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে এনএইচএসডিপি কার্যক্রমের আওতায় ২৬টি এনজিও’র মাধ্যমে ৩২৭টি ক্লিনিক এবং নয় হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে বছরে ২৬ লাখ শিশুকে ডায়রিয়ায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়রিয়া প্রতিরোধে শিশুকে নিয়ম মেনে শালদুধসহ মায়ের দুধ, স্বাভাবিক খাবার, শিশুর পায়খানা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানায় ফেলা, হামের টিকা দেওয়া, পায়খানা ব্যবহার ও খাওয়ার আগে ও পরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং জিংক খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে লবন ও পানি জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে শিশু মারাও যায়। তাই বেশি করে তরল খাবার (খাবার স্যালাইন, ভাতের মাড়, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি), বুকের দুধ ও স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে এবং পাতলা পায়খানা না কমলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
আমি যখন এ তথ্যগুলো জানাচ্ছি-এটুকু সময়ের মধ্যেই বিশ্বে ডায়রিয়ায় এক বা একাধিক শিশু মারা গেছে। এই শিশুরা হতে পারে কোন বাংলাদেশী মায়ের অথবা আফ্রিকা কিংবা তৃতীয় বিশ্বের কোনো একটি দেশের। অভাগা শিশুরা যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধাবঞ্চিত অসচ্ছল পরিবারের সন্তান এতে কোন সন্দেহ নেই। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্ব বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, উন্নত স্যানিটেশন ও স্যুয়ারেজ পদ্ধতি আর সবার জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক সুশিক্ষা নিশ্চিত করে ডায়রিয়ার মতো অভিশাপ থেকে বেঁচে গেছে। আজ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ অভিশাপমুক্ত হতে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
Your browser doesn’t support HTML5