কভিড মহামারী এবং দূষণ, দুটি স্বাস্থ্যজনিত জরুরী অবস্থার সাথে দিল্লির লড়াই

ভারতের রাজধানী দিল্লি বর্তমানে দুটি স্বাস্থ্য জনিত জরুরী অবস্থার মোকাবিলা করছে, একাধারে কভিড-১৯ মহামারী, অন্যদিকে দূষণজনিত সমস্যা। দিল্লি শহরের নোংরা বাতাস ভাইরাস থেকে সংক্রমণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে এবং কভিড-১৯ এ আক্রমণের সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা মানুষকে সতর্ক করেছেন।এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা অঞ্জনা পাসরিচা তার এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, এই বিষাক্ত বাতাসের জন্য মহামারীর বিরুদ্ধে শহরের লড়াই আরও শক্ত হয়ে উঠেছে।

ভারতের রাজধানীতে এমন হাজার হাজার লোকের মধ্যে রাজু ইদনানী এমন একজন যিনি প্রতি শীতে যখন শহরটি এসিডের ধোঁয়ায় আবদ্ধ থাকে, তখন শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। এ বছর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দুদিক থেকে দ্বিগুণ আঘাতের আশঙ্কা করেছিলেন। নয়াদিল্লির বাসিন্দা রাজু বলেন, "কভিড হল প্রথম চিন্তা, যা আপনার মাথায় আসবে। সুতরাং হ্যাঁ আমি এটি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলাম এবং এই কারণে আমি দিনে অন্তত ১0 বার আমার শরীরের তাপমাত্রা নিয়েছি”।

স্বাভাবিকভাবেই এটি যথেষ্ট চিন্তার কারণ ছিল। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে কভিড-১৯ এ সংক্রমণ হ্রাস পেলেও রাজধানীতে কিন্তু সংক্রমণ বেড়েছিল অনেক।। চিকিৎসকদের মতে শহরের দূষণযুক্ত বায়ুই এর জন্য দায়ী। ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাঃ সুরঞ্জিত চ্যাটার্জী বলেন, “দূষণ কী করে? এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে তোলে। একবার এটি প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিলে আপনার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। এবং কভিড-১৯ একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস হওয়ায় এটি আরও বেশি বেড়েছে এবং দেখা গেছে যে দূষণ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর পরিমাণ প্রায় ৯ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনকি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি ১৫ শতাংশও হতে পারে।

শীতের শুরুতে কর্তৃপক্ষ সমস্যাটি স্বীকার করেছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, "দূষণ শুরু হয়েছে। আকাশ ধোঁয়ায় ভরা এবং এটি করোনভাইরাসের পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে।" হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের বিছানা এবং ভেন্টিলেটর আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং চিকিৎসক এবং প্যারামেডিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক উৎসব মরসুমে বাজারগুলিতে ভিড়ও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাঃ সুরঞ্জিত চ্যাটার্জী বলেন, "আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ যেভাবে সংখ্যা বাড়ছে, দিল্লির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পক্ষে এটি পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে।"

এই বছরের শুরুতে লকডাউন চলাকালীন নীল আকাশের ঝলকানি এবং পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস ফেলা সেই শহরের মানুষদের জন্য বিশেষভাবে আনন্দদায়ক হলেও বিষাক্ত ধোঁয়া ফিরে আসা একটি বিশাল হতাশার কারণ হয়ে ওঠে। পরিবেশবিদরা যদিও বলছেন, এটি অনিবার্য ছিল কেননা দূষণের উৎসগুলি যেমন নির্মাণ কাজ থেকে ধূলিকণা, ফসলে পোড়ানোর আগুন থেকে ধোঁয়ার নির্গমন এবং দিল্লির রাস্তায় চলা ১০ কোটি যানবাহনের চলাচল থেকে বায়ুদূষণ নির্মূল করার জন্য খুব কম কাজ করা হয়েছে।পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা বলেন, "পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্রগুলিকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত, এবং পরিবেশদূষণ যে আমাদের রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক তা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অস্বীকার করতে করতে অনেক সময় পার করে দিচ্ছেন।"

আগামি বছরের বসন্তকাল অবধি এই নোংরা বাতাস সারা শহর জুড়ে থাকবে, দুটি স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থার সাথে দিল্লির লড়াই দীর্ঘ এবং যথেষ্ট কঠিন হতে পারে।

Your browser doesn’t support HTML5

ভিওএর সংবাদদাতা অঞ্জনা পাসরিচার প্রতিবেদনটি পড়ে শোনাচ্ছেন জয়তী দাশগুপ্ত