বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাজিকিস্তান এবং ইউক্রেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, কোভিড মহামারীর কারণে সারা বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় অগ্রগতি গড়ে ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বুধবার অর্থাৎ ২৪শে মার্চ ছিল বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। চিকিৎসকরা সতর্কবার্তা জারি করে বলেছেন যে, করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে যক্ষ্মা রোগের নিরাময়ে অগ্রগতি বারো বছর অর্থাৎ এক দশকেরও বেশি সময় পিছিয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা হেনরি রিজওয়েলের প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, ২০১৯ সালে যক্ষ্মায় ১৪ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল। ২০২০ সালে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সারা বিশ্ব জুড়ে স্বাস্থ্য পরিসেবা ব্যবস্থা খুবই চাপের মুখে পড়েছিল এবং সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি কভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় খুবই ব্যস্ত ছিল।
জেনেভাতে জাতিসংঘ দ্বারা পরিচালিত ‘স্টপ টিবি পার্টনারশিপ’ নামক অলাভজনক সংস্থার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যে নয়টি দেশে যক্ষ্মার উচ্চ প্রবণতা রয়েছে, তাদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়া এই চারটি দেশে যক্ষ্মার রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গড়ে ২৩ শতাংশ কমে গেছে।
‘স্টপ টিবি পার্টনারশিপ’ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার লুসিকা দিতিউ বলেন, "এটি আমরা যে সমস্ত কাজ করার চেষ্টা করেছি, যে অর্থও আমরা ব্যয় করছি, তার উপর কভিড-১৯ বিশেষ প্রভাব ফেলেছে, মূলতঃ আমাদের এতদিনের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে, মনে হয় যেন আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই ফিরে গেছি। বেশিরভাগ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, সরবরাহকারী, যারা যক্ষ্মা নিয়ে কাজকর্ম-করছিলেন, তাদেরকে কভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিযুক্ত করা হয়েছে”।
কভিড-১৯ এর মতো যক্ষ্মাও ফুসফুসের এমন একটি রোগ ভাইরাসের চেয়ে ব্যাকটিরিয়া থেকেই যার উৎপত্তি।যক্ষ্মা রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলিকে দ্রুত জরুরি কভিড-১৯ ইউনিটে রুপান্তরিত করা হয়েছিল। বিশেষকরে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশগুলি যখন লকডাউন জারি করেছিল, সেই সময় যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার অগ্রগতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
‘স্টপ টিবি পার্টনারশিপ’ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার লুসিকা দিতিউ বলেন, “সাধারণতঃ, যক্ষ্মাতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে থাকেন এবং এদের অনেকেরই স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা পেতে অনেক অসুবিধা রয়েছে। এর অন্যতম কারণগুলি অর্থ অথবা দারিদ্র্য এবং অন্যান্য ধরণের বাধা। এই যমস্ত অসুবিধেগুলি কভিড-১৯ এর কারণে আরও বেড়ে গিয়েছিল। অনেক চিকিৎসকই এটাই বলছেন যে, তারা এখন খুব খারাপ ধরণের যক্ষ্মা পর্যবেক্ষণ করছেন, যা তারা বহু বছরের মধ্যে দেখেননি।এর ফলে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার আরও অনেক বেশি হবে, এবং বাড়ির মধ্যে সংক্রমণ আরও বাড়বে।”
ডাক্তার লুসিকা দিতিউ বলেন যে, অনেক রোগী কোনও ক্লিনিক বা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই খারাপভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।তবে তার মতে,যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার হারিয়ে যাওয়া অগ্রগতি পুনুরুদ্ধার করার সুযোগ রয়েছে। করোনভাইরাস মহামারী স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলিকে একত্রে কাজ করতে বাধ্য করেছে। কোভিড এবং যক্ষ্মা সনাক্তকরণের পরীক্ষা, যোগাযোগের সন্ধান এবং চিকিৎসার সমন্বয়ের মাধ্যমে উভয় রোগ একই সাথে মোকাবিলা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, যক্ষ্মা রোগের নতুন ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় জরুরি বিনিয়োগেরও প্রয়োজন রয়েছে।
Your browser doesn’t support HTML5