বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কভিড-১৯ কে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করার পর এক বছর পেরিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বহু জায়গায় এক বছর ধরে রাস্তাগুলিতে গাড়ীর চলাচল ছিল খুবই কম, কিন্ত হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তির জন্য কোন জায়গা ছিল না। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা স্টিভ বাড়াগোনার প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, কভিড-১৯ পরবর্তী আগামী মাস এবং বছরগুলি কিরকম হতে পারে তাই নিয়েই আলোচনা।
এ বিষয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির প্রাক্তন পরিচালক টম ফ্রিডেন বলেন,"আমি মনে করি যদি আবার খুব খারাপ কিছু না হয়, তবে শরতকালের শুরুতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ, আমরা ব্যক্তিগতভাবে খেলাধুলার অনুষ্ঠানগুলিতে যোগ দিতে পারব, এছাড়াও সামাজিক অনুষ্ঠান, সিনেমা, রেস্তোঁরা এবং পানশালা গুলিতে আবার যেতে পারব"।ভ্যাকসিন প্রয়োগের পদ্ধতিও দ্রুততর হচ্ছে। জনসন এবং জনসন থেকে তৃতীয় একটি ভ্যাকসিন চালু করা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি চুক্তিতে মার্ক নামক একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা, সরবরাহ বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরও বলেছেন যে, মে মাসের শেষের দিকে আমেরিকাতে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ করার পথেই তারা এগোচ্ছেন।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লরেন্স গোস্টিন বলেন, "আমাদের কাছে ভ্যাকসিন অনেক বেশিমাত্রায় থাকবে হবে এবং আমি অনুমান করছি যে গ্রীষ্মের শুরুতে আমরা নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে আমাদের ভ্যাকসিন অনুদান শুরু করতে পারব।" তিনি আরও বলে, ধনী দেশগুলির স্বার্থেই নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। যে সমস্ত জায়গায় ভাইরাস এখনও ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে ভাইরাসের কোষগুলি প্রজনন করে আরও বিপজ্জনক নতুন রূপ নিয়ে উপস্থিত থাকতে পারে। এর ফলে কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লেগে যাবে। কিছু কিছু ভাইরাসের নতুন রূপ ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনগুলিকে দুর্বল করছে।এখনও এই ভ্যাকসিনগুলি যথেষ্ট কার্যকরী হলেও, নতুন রূপগুলি কিন্তু বিকশিত হতেই থাকবে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির প্রাক্তন পরিচালক টম ফ্রাইডেন আরও বলেন, “এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সন্তর্পণে অর্থাৎ আমাদের অজান্তেই চুপিচুপি শরীরে ঢুকে পরে এবং এটি আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলার ক্ষমতা রাখে এবং সেই কারণে সহজেই আক্রমণ করতে পারে।" আর একটি জিনিস হল, যদি আমরা ভাইরাসনিয়ন্ত্রণ করতে পদক্ষেপগুলি খুব তাড়াহুড়ো করে শিথিল করে ফেলি, তাহলে কিন্তু আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেরি হয়ে যেতে পারে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট আলী মোকদাদ বলেন, "আমরা গত বছর একই ভুল করেছি, মনে রাখবেন, এবং আমাদের এখনই খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের একই ভুল পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়, বিশেষতঃ এমন সময়ে যখন আমরা জানতে পারছি যে, এই ভাইরাসের কোষগুলি প্রজনন করে আরও কতগুলি নতুন রূপ নিয়ে আক্রমণ করতে পারে।"
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট যা করেছেন, বেশ কয়েকটি রাজ্য ঠিক তাই করছে। গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট যে কোনও ধরণের ব্যাবসাকে ১০০ শতাংশ অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে খোলার অনুমতি দিয়েছেন। এতে টেক্সাসে যে কোনও ধরণের ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যবসা ছাড়াও, সারা রাজ্য জুড়ে মুখে মাস্ক পড়ার বাধ্যতামুলক আদেশেরও তিনি সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অ্যাবটের এই পদক্ষেপটিকে সমর্থন করেননি। তিনি বলেন, "আমি মনে করি এটি একটি বড় ভুল। এবং এতদিনে সবাই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, এই মাস্কগুলি কিছুটা হলেও এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে”।
সবচেয়ে বড় দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হ'ল, সেই সব মানুষেরা যারা ভ্যাকসিনগুলিতে বিশ্বাস করে না। এ সম্পর্কিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, আমেরিকানদের প্রায় এক চতুর্থাংশ, আফ্রিকার ছয়টি দেশের প্রায় তৃতীয়াংশ এবং লেবাননে ৭৯% শতাংশ মানুষ এই ধারণায় বিশ্বাসী।" জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লরেন্স গোস্টিন বলেন, "এখনও বহু মানুষ এই টীকা নেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত। আমি মনে করি, সেই সব মানুষ যদি দেখে যে, এই টীকা কাজ করছে এবং তাদের প্রতিবেশী এবং পরিবারের সদস্যরা টিকা নিচ্ছেন, তখন তাদের এই মানসিক দ্বিধার অবসান ঘটবে, এবং এর পর সেখানে খুব কম সংখ্যক মানুষ থাকবে যারা এই টিকা নিতে চাইবেন না।"
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, কভিড-১৯ এখনও আমাদের সঙ্গে থাকবে, সুতরাং আমাদের সবাইকেই হয়তো বছরে একটি করে টিকা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন দেশগুলিতে আরও অনেক কারখানার প্রয়োজন রয়েছে। পৃথিবীর ধনী দেশগুলির জন্যই শুধু টিকার ব্যাবস্থা থাকবে, এবং গরীব দেশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেই দিন যেন আমাদের না দেখতে হয়, তার জন্যই এই ভ্যাকসিন উৎপাদন কারখানাগুলির প্রয়োজন রয়েছে ।
Your browser doesn’t support HTML5