প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অর্থনীতির উন্নয়নে,কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কুপ্রভাবের বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য ২৩০ কোটি ডলার অবকাঠামো তৈরির প্রস্তাব করছেন। তবে রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য বিভিন্ন ভবনগুলির অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত কংক্রিট বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের এক অন্যতম বৃহত্তম উৎস। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা স্টিভ বাড়াগোনা প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, জলবায়ুর উপর কংক্রিটের গুরুতর প্রভাবকে কমানোর জন্য প্রযুক্তির সাহায্যে নানারকম প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।
কার্বন বিল্ট নামক সংস্থার তৈরি কংক্রিট ব্লকগুলি কোনও সাধারণ কংক্রিট ব্লক নয়। এই সংস্থা এগুলি একটি বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে এক বিশেষ ধরণের চুলায় অথবা উনুনে বেক করে উৎপাদন করে। মিঃ গৌরব সান্ত হলেন কার্বনবিল্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, তিনি বলেন, “আপনারা বাড়িতে প্রচলিত যে ওভেনগুলি ব্যবহার করেন, তার থেকে এই চুল্লীগুলি একটু অন্যরকম। এখানে আমরা ফ্লু গ্যাসের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে থাকি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির চিমনী থেকে যে গ্যাস নির্গত হয়, তার কথা চিন্তা করুন। সেই একই জিনিষ আমরা এই সঞ্চালক ওভেনগুলিতে ব্যবহার করি, এবং সবশেষে তা থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তা হল এক ধরনের মিশ্রিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড”।
Your browser doesn’t support HTML5
কার্বনবিল্ট কোম্পানির তৈরি ব্লকগুলির মধ্যে সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড আবদ্ধ হয়ে যায়। এটি গুরুত্বপূর্ণ,কারণ কংক্রিট তৈরির ফলে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। কংক্রিট হল সিমেন্ট, পাথর এবং বালির মিশ্রণ, সিমেন্ট তৈরিতে ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চুনাপাথর পোড়ানো হয়। আগুনের শিখা কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে, তবে গরম চুনাপাথর নিজেই এই গ্যাস আরও বেশি পরিমাণে তৈরি করে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল CO2 ইনিশিয়েটিভ পরিচালক ভোলকার সিক বলেন, এক টন কংক্রিট এক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে এবং এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে বেড়েই চলেছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইনিশিয়েটিভ পরিচালক ভোলকার সিক বলেন, "আমরা যদি আরও ফলপ্রসূ উপায়ে কংক্রিট তৈরির উপায়গুলি না খুঁজে পাই তবে আমাদের সমস্যা আছে।" কার্বনবিল্ট হল বেশ কয়েকটি সংস্থার মধ্যে একটি, যারা আরও একটি ফলপ্রসূ উপায় উদ্ভাবন করেছে, তারা তাদের প্রযুক্তিতে এমন এক পরিবর্তন এনেছে, যাতে করে সিমেন্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করতে পারে।
কার্বনকিয়োর সংস্থার প্রেসিডেন্ট জেনিফার ওয়াগনার বলেছেন,এই পদ্ধতিতে বায়ুমণ্ডলের ভিতরে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের অস্তিত্ব কমানো ছাড়াও আরও বেশী কিছু করা সম্ভব হচ্ছে।তিনি বলেন, "কার্বন ডাই অক্সাইড কংক্রিটকে আরও শক্তিশালী করে তোলার উপাদান হিসেবে কাজ করে, সুতরাং কম সিমেন্ট ব্যবহার করে তার সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত করে কংক্রিটের কাঙ্ক্ষিত শক্তি অর্জন করা যায় এবং সিমেন্ট কংক্রিটের সর্বাধিক কার্বন-নিবিড় উপাদান হিসাবে পরিগণিত হয়।" কম সিমেন্টের অর্থ কম কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যাবহার, এবং এতে অর্থ সাশ্রয় করাও সম্ভব হচ্ছে। এটি এই শিল্পে নতুন গ্রাহক পেতেও সহায়তা করতে পারে, এমনটাই বলছেন মিস ওয়াগনার। কার্বনকিয়োর সংস্থার প্রেসিডেন্ট জেনিফার ওয়াগনার আরও বলেন, "প্রত্যেকে পরিবেশকে আরও সবুজ করে তৈরি দেখতে চায়, তবে তারা বেশি অর্থ ব্যয় করতে চায় না।"
প্রযুক্তিগত এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ অর্ধেকের বেশী কমানো যেতে পারে। কার্বনবিল্ট এবং কার্বনকিয়োর, এই দুটি সংস্থা সম্প্রতি কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাসকে ব্যবহার করে বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত পণ্যগুলিতে পরিণত করার জন্য কার্বন এক্সপ্রাইজ জিতেছে। অধ্যাপক ভোলকার সিক বলেন, এটি একটি ভাল সূচনা। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অধ্যাপক ভোলকার সিক বলেন, "আমি মনে করি এটি নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। আমরা এখন কি এটি সর্বত্র কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত? আমাদের সমস্যা সমাধানের একটি উপায়, সামনে চলার আরও পথ পাওয়া গেছে।"
কার্বনকিয়োর সংস্থার প্রেসিডেন্ট জেনিফার ওয়াগনার বলেন,"এই মুহুর্তে আমাদের কাছে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩00 টি কংক্রিট স্থাপনা রয়েছে যারা প্রতিদিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলেছে, সেখানে প্রায় এক লক্ষ গাছপালা রয়েছে, তাই আমরা সত্যিই কেবলমাত্র এই কাজ শুরু করতে পেরেছি।"
এই প্রযুক্তিগুলি সবেমাত্র প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। রাস্তা তৈরি করতে যে কংক্রিটের পেভারস অর্থাৎ কংক্রিটের আস্তরণের প্রয়োজন হয়, সলিডিয়া নামক একটি সংস্থা একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলি উৎপাদন করছে।
পৃথিবীতে সর্বাধিক এবং প্রচুর পরিমাণে মানবসৃষ্ট উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল কংক্রিট, তাই জলবায়ুর উপর এর বিশাল প্রভাবকে কমানোর জন্য আরও অনেক দীর্ঘ পথ আমাদের যেতে হবে, এবং আরও অনেক সময় লেগে যাবে।