বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রতি বছরই বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থী। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম ও সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষাখাতে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা যোগ হওয়ার কারণেই বিদেশিরা আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক সময় বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মালয়েশিয়া, ইরান ও নেপাল থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন। এখন মেডিকেলে পড়তে আসছেন ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিলেন ২ হাজার ৩১৭ জন। এর মধ্যে ২৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৬৭ জন এবং ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। বছরভিত্তিক তালিকায় বিদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে, ২০১৯ সালে ৪৮২ জন, ২০১৮ সালে ৮০৪ জন, ২০১৭ সালে ৪৬১ জন, ২০১৬ সালে ৩৫৫ জন, ২০১৫ সালে ৫৯৩ জন, ২০১৪ সালে ৪৩২ জন, ২০১৩ সালে ৩২৬ জন, ২০১২ সালে ৫২৫ জন এবং ২০১১ সালে ২১০ জন। বিগত বছরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকার পরও উচ্চশিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪৬৭ জন, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৩৮৬ জন, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৯৭৭ জন, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৯২৭ জন এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৪৮ জন।

২০২০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থী বেড়েছে ৮৩ জন। দেশের ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের ২৬টি দেশের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ছেন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, লেবানন, তানজানিয়া, অস্ট্রিয়া, রুয়ান্ডা, জিবুতি, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান এবং বাহরাইন থেকে আসা শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, "স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক ছিল। মাঝে একটু কমলেও এখন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ দেশের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক উন্নয়ন। বিশেষ করে শিক্ষাখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার থাকার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি, কোর্স, কারিকুলাম ও সিলেবাসসহ আনুষঙ্গিক তথ্যগুলো তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই জানতে পারছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং চীনের মতো দেশের শিক্ষার্থীরা আসার কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অধ্যাপকের মতে, "শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা না থাকা এবং ভর্তি প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল হওয়ায় বিদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা এ দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার আগ্রহ পান না।

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা ও ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কাটিয়ে সহজ করা হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা এ দেশে পড়াশোনায় আগ্রহী হবেন বলে আশা করা যায়।"

জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সে তুলনায় পিছিয়ে। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে মাত্র সাতজন বিদেশি শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে দুজন, ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ১৬ জন, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে চারজন, ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে আটজন এবং ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অথচ একই সময়ে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ শ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। সংশিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং কম থাকা এবং পর্যাপ্ত প্রচার-প্রচারণা ও শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ না থাকার কারণে দেশে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা কম।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ভর্তি তথ্য তুলে ধরা, আলাদা ডেস্ক বা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের সহায়তা করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব প্রচারণা চালানোর মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।