বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ফের অশান্ত। মিয়ানমারের বাড়তি সেনা মোতায়েনের পর বাংলাদেশ এটাকে সন্দেহের চোখেই দেখছে। বাংলাদেশ মনে করে, এর ফলে নতুন কোন সংকট তৈরি হতে পারে। একারণেই রোববার ঢাকাস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সন্দেহজনক এসব তৎপরতা বন্ধ করে দুই দেশের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি অবসানের জন্য মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে গণহত্যা শুরুর প্রাথমিক পর্বে সেখানে সেনাদের জড়ো করেছিল মিয়ানমার। শুক্রবার ভোরে শুরু হওয়া এই সেনা সমাবেশের কারণে রাখাইনে এখন যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার ভোরে আন্তর্জাতিক সীমান্তের তিনটি পয়েন্টে ট্রলার থেকে সেনাদের নামানো হয়। যা সীমান্ত পয়েন্টগুলোর মধ্যে অন্তত একটির দূরত্ব আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২০০ মিটারের মধ্যে। ওই তিন পয়েন্টে মাছ ধরার ট্রলারের কাঠের নিচে বসিয়ে সেনাদের জড়ো করা হয়। অন্তত এক দিনেই এক হাজারের বেশি সেনা আনা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের সেনাদের বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েনের একাধিক কারণ থাকতে পারে। একটা কারণ হতে পারে, সেনাসমাবেশ বাড়িয়ে নিজেদের উপস্থিতি আরও জোরদার করা। আরেকটা কারণ হতে পারে, তিন–চার বছর ধরে, বিশেষ করে যারা ২০১৭ সালের আগস্টের রোহিঙ্গা গণহত্যার অপারেশনে যুক্ত ছিল, তাদের দ্রুত সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেয়া। বিশেষ করে আইসিসিতে দুই সেনার জবানবন্দি রেকর্ডের পর থেকে পুরোনো সেনাদের মিয়ানমার সরকার সীমান্ত থেকে ফেরত নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নতুন করে আর কোনো সেনা যাতে পক্ষ ত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে মিয়ানমার জোর দিচ্ছে।
ওদিকে রাখাইনে ফের আগুন জ্বলছে। তিন বছর আগে গ্রামে গ্রামে পাহারা বসিয়ে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে যে বৌদ্ধরা (মগরা) বর্মী সেনাদের সহায়তা করেছিলো এখন তাদের সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মিকে উচ্ছেদের টার্গেটে অপারেশন চালাচ্ছে মিয়ানমার আর্মি।
বর্মী বাহিনীর টার্গেটে পরিবর্তন এলেও অশান্ত রাখাইন পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হিসাবেই থাকছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাদের সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিলে সীমান্তে আশ্রয় প্রার্থনাকারী রোহিঙ্গা ও মগদের চাপ বাড়তে পারে। গত মার্চ থেকে রাখাইনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্তত ১০টি গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে বর্মী বাহিনী।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাখাইনে এখনও পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
Your browser doesn’t support HTML5