সন্ত্রাস ছেড়ে ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে আফগানিস্তানের তরুণ সমাজ। সম্প্রতি দেশটিতে জনিপ্রয় হওয়া এই ক্রিকেট খেলা; তরুণ সমাজকে তালিবান ও ইসলামিক ষ্টেটসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠণের আদর্শ থেকে সরিয়ে আনছে। একইভাবে তরুণ সমাজকে মাদকসহ নেতইবাচক দিকে ঝোঁকার প্রবণতা কিময়ে আনছে। এ বিষয়ে ভয়েস অব আমেরিকার আফগান বিভাগের জাহিদ নুরের প্রতিবেদন শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।
Your browser doesn’t support HTML5
পূর্ব আফগানিস্তানের বহু পিতামাতা তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারন কম বয়সী ছেলেমেয়েরা ইসলামিক ষ্টেট বা তালিবানের মতো জঙ্গি সংগঠনের প্ররোচণায় আকৃষ্ট হচ্ছে। হাজী দাউদ পূর্ব আফগানিস্তানের জালালাবাদের একজন ব্যাবসায়ী যিনি তার দুই টিনেজার ছেলের ভিবিষ্যৎ নিয়ে ভীষনভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। দাউদ জানান, তার দুই পুত্রই মোবাইল ফোনে তালেবান এবং ইসলামিক ষ্টেটের ভিডিও দেখে দেখে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। পরে তারা তাদের আরো কয়েজন বন্ধু নিয়ে জঙ্গী দলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে দাউদ ভয় ও শংকায় দিন কাটাতে থাকেন।
২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আফগানিস্তান জাতীয় দলের একটি জয়ের মাধ্যমে দাউদের দুই ছেলের মনের পরিবর্তন শুরু হয়। তারা টিভিতে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই খেলাটি দেখেছিল। আফগানিস্তান টিম সেই খেলায় স্কটল্যান্ডকে হারায়।
দাউদ জানান, “সেই খেলাটি তাদের মানকে বদলে দেয়। এখন তারা দুজনই কিকেট ভক্ত এবং টিভিতে ও তাদের মোবাইল ফোনে মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখে। তারা এখন জঙ্গীদের সংঘর্ষ বা মারামারির এবং প্রচার প্রচারণার খবরের চেয়ে বেশী দেখে আফগানিস্তান ক্রিকেট টিমের খেলার খবর”।
আফগানিস্তানের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের মতে, “ক্রিকেট, এখনো পর্যন্ত আফগানিদের কাছে নতুন একটি খেলা। আর এই খেলাইটিই হতে পারে সন্ত্রাস সহিংসতা ও আপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে তরুন আফগানিদের মনোভাব পরিবর্তনের শক্তিশালী একটি হাতিয়ার”।
ইসলামিক ষ্টেট যখন আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে; তখন তালিবানও কিছুটা যেনো সন্ত্রাসী কাজকর্ম কমিয়েছে। ক্রিকেটের উন্নয়ন এই ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস।
অফগান ক্রিকেট দলের তারকা বোলার হামিদ হাসান বলেন, “ভুল পথে না গিয়ে, অস্ত্র ও মাদক না নিয়ে; আমাদের উচিৎ খাতা কলম এবং ব্যাট ও বল হাতে নেয়া”।
আফগান ক্রিকেট বোর্ড দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেনো তরুন সমাজ ক্রিকেট খেলতে পারে সে লক্ষ্যে আন্ডার-১৯ টিম করেছে। সেসব টিমে নতুন খেলোয়াড়দেরকে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
তরুন এক অফগান ক্রিকেট ভক্ত ফজল রহিম বললেন, “ক্রিকেট মানুষের জীবনে দারুন ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে”।
ক্রিকেট প্রোমোটার এবং জঙ্গী দল উভয়েই ক্রিকেটকে ব্যাবহার করতে শুরু করেছে তরুনদেরকে দলে ভেড়ানোর কৌশল হিসাবে। জঙ্গী গোষ্ঠি গ্রামের বেকার তরুন যুবকদেরকে নানা ধরনের লোভ দেখিয়ে তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।
জঙ্গীরা তরুনদেরকে আকৃষ্ট করছে সামাজিক মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে আসা জিহাদি ভিডিও দেখিয়ে। ইসলামিক ষ্টেট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাদের আদর্শ ছড়ানোর চেষ্টা করছে। নভেম্বরে নানগারহার বিশ্বিবদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থী হোষ্টেলের সীট পাওয়া ও খাবার মান উন্নত করার আন্দলনের সময় আইএস ও তালেবান পতাকা ওড়ায়।
আফগানিস্তানের ক্রিকেট ব্যাবস্থাপকরা ক্রিকেটের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট তরুনদেরকে খেলার প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন। আর তারই অগ্রগতি হিসাবে যুদ্ধ বিধ্ধস্থ দেশটিতে ইতিমধ্যেই ক্রিকেট বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ভালো করছে আাফগান ক্রিকেট টিমও। তারা জিম্বাবুয়ের মতো দলকে সম্প্রতি হারিয়েছে। শফিক ষ্টেনকজাই, আফগান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক। তিনি জানান, “আমরা চেষ্টা করছি ক্রিকেটের মাধ্যমে তরুনদের সন্ত্রা্স থেকে মন ফিরিয়ে ক্রীড়ার প্রতি ইতিবাচক মনোভাবে আকৃষ্ট করা”।