প্রেসিডেন্ট বাইডেন খোলা চিঠিতে সাফল্যের বর্ণনা দিলেন

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওভাল অফিস থেকে তাঁর শেষ ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগে বুধবার সন্ধ্যায় ওভাল অফিস থেকে তাঁর বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প-এর অভিষেকের পাঁচ দিন আগে তিনি এই ভাষণ দিলেন

বুধবার সকালে প্রকাশিত এক চিঠিতে, বাইডেন স্মরণ করেন, যেভাবে কোভিড-১৯ এবং ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার ছায়ার নিচে তাঁর প্রশাসন যাত্রা শুরু করেছিল। ট্রাম্প সমর্থকদের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়া, বাইডেন যে নির্বাচনে জয়ী হন।

“চার বছর আগে, আমরা এক বিপদের শীতকাল আর সম্ভাবনার শীতকালের মাঝে দাঁড়িয়েছিলাম,” বাইডেন চিঠিতে বলেন। “কিন্তু আমরা আমেরিকান হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমরা বিপদ পার হই। আমরা আরও শক্তিশালী, আরও সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ হিসেবে বেড়িয়ে আসি।”

প্রেসিডেন্টের বিদায়ী ভাষণ আসলো বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ তার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার এক দিন পর। স্মিথ ২০২০ নির্বাচনের পর বেআইনি ভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

বিদায়ী ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। ফটোঃ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫।

স্মিথের রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটা না হলে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ ছিল, স্মিথ দাবী করেন।

ট্রাম্প কোন ভুল কাজ করার কথা বার বার অস্বীকার করেছেন এবং বিশেষ কৌঁসুলির কাজকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।

বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ ছিল ওভাল অফিস থেকে তার পঞ্চম এবং শেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণ। বাইডেন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড-এর প্রশংসা করেন।

ছয় মাস আগে ওভাল অফিস থেকে তাঁর আগের ভাষণে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করেন এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২৪ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে অনুমোদন করেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সফল নির্বাচনের সময় তিনি যে “আমেরিকার আত্মার জন্য লড়াই” নীতি নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, বাইডেন সেটার দিকে ফিরে তাকান।

“আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, কারণ আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে আমেরিকার আত্মা এখানে জড়িত ছিল,” বাইডেন চিঠিতে লেখেন। তিনি বলেন, আমেরিকা এমন একটি ধারণা যার ভিত্তি হচ্ছে “আমরা সবাই সমঅধিকার নিয়ে জন্মেছি, সৃষ্টিকর্তা কিছু অবিচ্ছেদ্য অধিকার আমাদের দিয়েছেন, যার মধ্যে আছে জীবন, স্বাধীনতা এবং সুখের সাধনা।”

“আমরা কখনোই এই পবিত্র ধারণা পুরোপুরি ধারণ করতে পারি নাই, কিন্তু আমরা সেগুলো থেকে কখনো মুখ ফিরিয়েও নেই নাই,” তিনি বলেন। “এবং আমি বিশ্বাস করি না যে, আমেরিকান জনগণ এখন সেগুলো থেকে সড়ে যাবে।”

বাইডেনের ইতিহাস

বাইডেন তাঁর মেয়াদ শেষ করছেন পররাষ্ট্রনীতিতে সাফল্য দিয়ে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি ঘোষণা করেন যে ইসরায়েল এবং হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।

“এটা সম্ভব করার পেছনে কারণ শুধু এই না যে, হামাস চরম চাপের মধ্যে ছিল এবং লেবাননে যুদ্ধবিরতি আর ইরান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে – এর পেছনে আমেরিকার লেগে-থাকা এবং প্রচণ্ড পরিশ্রমী কূটনীতিরও অবদান রয়েছে,” বাইডেন বলেন। “এটা অর্জনের জন্য আমার কূটনীতি কখনো থেমে থাকেনি।”

হোয়াইট হাউসে দেয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন যে তাঁর প্রশাসন এই চুক্তিতে মধ্যস্ততা করেছেন, যেটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পড়বে মূলত পরবর্তী প্রশাসনের উপর। ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে চুক্তির জন্য কৃতিত্ব দাবী করেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন যে, “শুধু মাত্র নভেম্বরে আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণেই এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হলো।”

জরিপ সংস্থা গ্যালাপ অনুযায়ী, বাইডেন তাঁর মেয়াদ শেষ করছেন ৩৯ শতাংশ ইতিবাচক রেটিং নিয়ে। তিনি তাঁর প্রশাসনের শেষ কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করেছেন তাঁর লেগাসি পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে।

টেনেসি রাজ্যের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাসবিদ থমাস শোয়ার্টজ বলেন যে, আগামী চার বছর ট্রাম্প কীভাবে শাসন করেন তা বাইডেনের লেগাসির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

“যদি ট্রাম্পের শাসন বিপর্যস্ত হয় ... হয় অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে এসে, অথবা বিশ্বে যদি যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তাহলে বাইডেনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হবে,” তিনি ভিওএ-কে বলেন। “ট্রাম্প যদি আসলেই গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন যা বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটরা বলেছে, তাহলে আমার মনে হয় বাইডেনকে দূরদর্শী হিসেবে গণ্য করা হবে।”

অন্যদিকে, একটি শক্তিশালী অর্থনীতি হাতে পেয়ে এবং বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়া সমস্যা কমে আসায়, ট্রাম্পের সামনে সুযোগ আছে রনাল্ড রেগানের মত একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হবার, শোয়ার্টজ বলেন। সেক্ষেত্রে, ইতিহাসবিদরা বাইডেনকে আইনপ্রণয়নের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য উল্লেখ করবে, কিন্তু “ভালবাসার সাথে স্মরণ করা হবে না।”

'ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি'

হোয়াইট হাউস দেশে এবং বিদেশ বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সাফল্যের একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করে।

তালিকায় বিশেষ করে উল্লেখ করা হয় “ঐতিহাসিক” অর্থনৈতিক অগ্রগতি, যার ফলে এক কোটি ৬৬ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং মোট দেশজ সম্পদ (জিডিপি) ১২.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তালিকায় অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি, এবং বাইডেন-প্রণীত আইনের মাধ্যমে কম্পিউটার চিপ উৎপাদনকারী সেমিকন্ডাক্টর, চিপস অ্যাক্ট উল্লেখ করা হয়।

হোয়াইট হাউস যুক্তি দেখায় যে, ন্যায্য করনীতি এবং যেখানে সাহায্য দেয়া প্রয়োজন সেখানে সাহায্য দিয়ে বাইডেন প্রশাসন “আরও শক্তিশালী, ন্যায্য অর্থনীতি” পুনর্নির্মাণ করেছে। এর ফলে, সমাজের নিচের স্তর থেকে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাইডেন তাঁর চিঠিতে বলেন যে, “এই জাতিকে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সেবা করা ছিল আমার জীবনের বড় সুবিধা।”

“আমি আমার হৃদয় আর আত্মা আমাদের দেশকে দিয়েছি। এবং আমেরিকান জনগণের ভালবাসা এবং সমর্থন আমাকে লক্ষ গুন বেশি আশীর্বাদ দিয়েছে।”