পাকিস্তানের আদিবাসী কুররাম জেলার লায়লা ইব্রাহিম টেলিফোনে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ আমরা মানসিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত । আমার একটি ছেলে আছে। আমি এমনকী রাতেও ঘুমাতে পারিনা । সে বলে সে লড়াই করতে যাবে”।
তিন দিক দিয়ে আফগানিস্তান দ্বারা ঘিরে থাকা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের এই জেলাটি প্রধানত গোটা দেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন। অক্টোবরের মাঝামাঝির দিকে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে ধর্মীয় গোষ্ঠীগত সহিংসতার মারাত্মক ঘটনার পর থেকে সেখানকার জনপথে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় এই জেলাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন কুররামের অবরুদ্ধ অধিবাসীরা খাদ্য ও ঔষধপত্রের চরম ঘাটতির সম্মুখীন, তাদের মধ্যে অপুষ্টি ও মানসিক যন্ত্রণার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে।
ওই অঞ্চলের দূর্গম গ্রামের লোকজনের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে জরিপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এয চিকিৎসক ডা কায়সার বাঙ্গাশ পারাচিনার থেকে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন,” আমরা দেখেছি জনসংখ্যার বেশির ভাগই এখন পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন”।
তিনি বলেন, “ তাদের কোন সবজি নেই, ফল নেই , ডাল নেই, ঘি নেই। তারা দুধ খুঁজে পাচ্ছে না। শিশুদের জন্য ফর্মূলা দুধ নেই। আর এ কারণেই পরিস্থিতি খুবই খারাপ”।
তিনি বলেন, নিয়মিত ভাবে খাদ্য সরবরাহ না হওয়ায়, লোকেরা প্রায়ই সিদ্ধ চাল, শুধু গমের রুটি, দুধ ও চিনি ছাড়া চা এবং স্থানীয় ভাবে মৌসুমি শাক-সব্জি খেয়ে জীবন যাপন করছেন।
সহিংসতা অবিরত
গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ধর্মীয় গোষ্ঠীগত সহিংসতায় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। গ্রীষ্মকাল ও হেমন্তকালের মধ্যে নিহত হবার পর ২১ নভেম্বর ছিল সব চেয়ে ভয়াবহ দিন। সেদিন শিয়া যাত্রীদের একটি যানবহরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, ৫২ জনকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞের দায় কেউই স্বীকার করেনি কিন্তু পাল্টা আক্রমণে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় আরও ৮০ জন নিহত হন।
কুররাম জেলার সহিংসতার ঐতিহাসিক উৎপত্তি শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে জায়গা নিয়ে বিবাদ তবে প্রায়ই তা ধর্মীয় উপদলের সংঘাতে পরিণত হয়। এক শতকেরও বেশী সময় ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নিরাপত্তার স্বার্থ আর সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ায় উভয় পক্ষই নিজেদের ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করতে বাধ্য হয়।
নভেম্বর মাসে শিয়া যানবহরকে লক্ষ্য বস্তু করায় ১২ অক্টোবর সুন্নি বাশিন্দাদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালানো হয়।
সরবরাহে ঘাটতি
অক্টোবর মাসের মারাত্মক আক্রমণের পর ওই অঞ্চলে জরুরি পণ্য নিয়ে দক্ষিণ দিক দিয়ে তেমন কোন ট্রাক প্রবেশ করে নাই।
সহিংসতার হুমকির মুখে বেশ কিছুদিন বিলম্বের পর বুধবার প্রধানত ফলমূল, শাক-সবজি ও হাঁস-মুরগি নিয়ে একটি যানবহর প্রবেশ করে। যে টুকু এসেছিল তা ছিল উচ্চমূল্যের এবং দীর্ঘ সময়ে থেমে থাকার পর , তা অংশত নষ্ট হয়ে যায়।
ওই সীমিত সরবরাহ নিতে পারেননি তেমন কেউ ।
তিন সন্তানের জননী পারাচিনার মেহউইশ শাজাদ ফোনে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমরা কিছুই কিনতে পারিনি। এত ভিড় ছিল, লোকজন একে অন্যকে ধাক্কা দিচ্ছিল”।
শহরের দিকে আসা গ্রামবাসীরাও তেমন কিছু পাননি।
স্থানীয় সাংবাদিক হিদায়াত পাসদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ গাড়িগুলি সন্ধ্যায় আসে। কোন ডিজেল বা পেট্রল ছিলনা যাতে লোকজন গ্রাম থেকে শহরে এসে পণ্য কিনতে পারে”।
ওষুধের দোকানের তাকগুলি প্রায় শূণ্য।
ছোট ছোট দোকানগুলি থেকে ওষুধ না পাওয়ার কারণে লোকজনকে জেলা সদর পারাচিনারে যেতে হয়েছে। বাঙাশ বলছেন রোগির সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
যদিও সরকার ও সাহায্য গোষ্ঠীগুলি কিছু ওষুধ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সরবরাহ করেছে কিন্তু বাঙাশ বলছেন পরিমাণটা পর্যাপ্ত নয়।
মনস্তাত্বিক কষ্ট
এই সহিংসতা মানসিক কষ্টেরও কারণ হয়ে রয়েছে।
মনস্তত্ববিদ কালসুম বাঙ্গাশ বলেন , “ বেশির ভাগই হতাশাক্রান্ত , দুশ্চিন্তা ও ভয়ের রোগি ছিল। শিশুরা অভ্যেসের দাস হয়ে গেছে। যারা স্থানচ্যূত হয়েছে তারা চিন্তিত , যখন ফিরে যাবে তখন তারা আবার ঠিক মতো সাজাবে কেমন করে”।
এমনকী যারা সহিংসতার কারণে স্থানচ্যূত হননি তারাও অবিরাম বয়ে ভুগছেন।
মনস্তত্ববিদ বাঙ্গাশ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ আমি লক্ষ্য করেছি শিশুরা েখলার সময়েও এটা ভেবে ভয় পায় যে গুলি উড়ে আসতে পারে। তারা শব্দ শুনলে বলে এটা গুলির শব্দ”।
নড়বড়ে শান্তি
কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকরের নেতৃত্বে আপোষ আলোচনার পর সংঘর্ষশীল সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায় ১ লা জানুয়ারি ১৪ দফা চুক্তিতে পৌঁছেছে।