টিউলিপ সিদ্দিকঃ শেখ হাসিনার 'দুর্নীতি বিতর্কে' জড়িয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদত্যাগ

ব্রিটেনের মন্ত্রীসভার সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। ফাইল ফটো।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমারের মন্ত্রীসভার সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক দেশের সিটি মিনিস্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশে তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সাথে তার নাম যুক্ত হওয়ায়, সিদ্দিক গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পদত্যাগের জন্য প্রবল চাপের মধ্যে ছিলেন।

লন্ডনে জন্ম নেয়া সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বড় মেয়ে। হাসিনা গত ৫ অগাস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন।

সিদ্দিক, মন্ত্রী হিসেবে যার দায়িত্বের মধ্যে আর্থিক দুর্নীতি মোকাবেলা ছিল গুরুত্বপূর্ণ অংশ, মঙ্গলবার পদত্যাগের কথা সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ প্রকাশ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পদত্যাগপত্রও পোস্ট করেন।

“একটি নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করেছে যে আমি মন্ত্রীদের নৈতিকতার কোন নিয়ম ভঙ্গ করিনি এবং এমন কোন প্রমাণ নেই যে আমি অনুচিত ভাবে কোন কাজ করেছি,” তিনি তার পদত্যাগপত্রে বলেন।

“তবে এটা পরিষ্কার যে, ট্রেজারি বিভাগে ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকলে তা সরকারের কাজের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমি আমার মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” তিনি বলেন।

সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় খবর আসে যে ৪২-বছর বয়সী সিদ্দিক লন্ডনে কয়েকটি বাড়িতে বসবাস করেছেন, যেগুলোর সাথে হাসিনার দলের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের সংযোগ ছিল। এর পরেই সিদ্দিক নিজেই নিজের বিষয় প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের মন্ত্রীদের নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে তদন্তের জন্য পাঠান।

ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান মঙ্গলবার জানায়, উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার রিপোর্টে বলেন যে সিদ্দিক কোন নিয়ম ভঙ্গ করেন নি। কিন্তু তিনি বলেন যে, সিদ্দিকের উচিত ছিল বাংলাদেশে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা। ম্যাগনাস স্টারমারকে উপদেশ দেন যে, সিদ্দিকের বর্তমান দায়িত্ব সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে।

এর আগে সোমবার বিবিসি নিউজের এক রিপোর্টে বলা হয় যে, অক্সফ্যাম এবং ট্র্যান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও সিদ্দিককে তার দুর্নীতি-বিরোধী ভূমিকা থেকে সরে আসার আহ্বান জানায়।

ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশনের আহ্বান আসে সিদ্দিকের নাম বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি তদন্তে অন্তর্ভুক্ত হবার পর।

টিউলিপ সিদ্দিক (বাঁয়ে) ১২ বছর আগে খালা শেখ হাসিনার সাথে রাশিয়া সফর করেন। ছবিতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং হাসিনার বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদকে দেখা যাচ্ছে। ফাইল ফটোঃ ১৫ জানুয়ারি, ২০১৩।

বিবিসি রিপোর্টে বলা হয়, রাশিয়ার সাথে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিতে ব্যাপক দুর্নীতির যে অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে, তাতে টিউলিপ সিদ্দিকও অভিযুক্তদের একজন। বাংলাদেশের একজন রাজনিতিক, ববি হাজ্জাজের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে সিদ্দিক রাশিয়ার সাথে চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি করতে সহায়তা করেন যেখানে প্রকল্পের মূল্য ১০০ কোটি ডলার বেশি দেখানো হয়।

সিদ্দিক তার পদত্যাগপত্রে বলেন যে, তার বিবৃতিতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার খালা, এবং সে কারণে তিনি বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোন বিষয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, উপদেষ্টা ম্যাগনাস তার রিপোর্টে বলেছেন, মন্ত্রীর “এমন কোন সম্পদ নেই যা আইনসম্মত পথ ছাড়া অন্য কোন পথে অর্জন করা হয়েছে।”

“আমি আপনাকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি যে, এসব বিষয়ে আমি স্বচ্ছতার সাথে এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি,” সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলেন।

টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৭ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে নতুন নির্বাচনী এলাকা হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট থেকে ৪৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে চতুর্থবার হাউস অফ কমন্সে আসন লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার গত বছর ৯ জুলাই সিদ্দিককে তার মন্ত্রীসভায় সিটি মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি) পদে নিয়োগ করেন।