আফগানিস্তানে নারীর প্রতি তালিবানের বৈষম্য নীতি প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করতে মালালার আহ্বান 

ইসলামাবাদে “মুসলিম সম্প্রদায়ে নারীশিক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ” শীর্ষক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। ফটোঃ ১২ জানুয়ারি, ২০২৫।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই রবিবার আফগানিস্তানের শাসক তালিবানকে “বৈধতা” না দিতে বিশ্বের মুসলিম নেতাদের অনুরোধ করেছেন। তার অভিযোগ, তালিবান “লিঙ্গবৈষম্যের অপরাধে” দায়ী। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীশিক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে পাকিস্তান। এই সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে ইউসুফজাই বক্তব্য রেখেছেন। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে আফগান নারীদের সুযোগ-সুবিধা লাভের উপর তালিবান সরকারের কট্টর বিধিনিষেধ চাপানোকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন তিনি।

শিক্ষা বিষয়ক এই সক্রিয় কর্মী বলেছেন, “গত সাড়ে তিন বছর ধরে তালিবান প্রতিটি আফগান মেয়ের থেকে শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে; এবং একে ন্যায্য প্রমাণ করার জন্য তারা ধর্মবিশ্বাসকে হাতিয়ার করেছে।”

তিনি বলেন, “তালিবান তাদের লক্ষ্যের বিষয়ে সুস্পষ্ট। জনজীবনের সকল পরিসর থেকে তারা নারী ও মেয়েদের বহিষ্কার করতে এবং সমাজ থেকে তাদের মুছে দিতে চায়। সহজভাবে বললে, তালিবান নারীদের মানুষ বলে মনে করেন না। তারা তাদের অপরাধকে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার চাদরে আড়াল করছে।”

২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে তালিবান এবং তাদের মতো করে ইসলামি আইনের কঠোর ব্যাখ্যা, যা শরিয়া নামে পরিচিত, তা চাপিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের উপর। জাতিসংঘ এই শরিয়াকে “লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক” হিসেবে তকমা দিয়েছে।

আফগান মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর স্কুলে যাওয়াকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, অভিবাসন ও পুলিশের মতো কয়েকটি বিভাগ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে।

মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ বা এমডব্লিউএল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দুই দিনের সম্মেলনের আয়োজন করে; এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন মন্ত্রী, শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রায় ৫০টি মুসলিম প্রধান দেশের গবেষক, জাতিসংঘ ও একাধিক বেসরকারি সংগঠনের বহু প্রতিনিধি।

ইউসুফজাই বলেছেন, “এই কক্ষে উপস্থিত সকলের জন্য আমার কাছে একটি বার্তা রয়েছে। মুসলিম নেতা হিসেবে আপনাদের সরব হওয়ার ও ক্ষমতা ব্যবহারের সময় এসেছে। আপনারা প্রকৃত নেতৃত্ব ও ইসলাম কেমন হওয়া উচিত তা দেখাতে পারেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আফগান নারী ও মেয়েদের মুক্ত করতে হবে যাতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন। আপনাদের মতো সহ-মুসলিম ও নেতারাই তাদের লক্ষ্য পূরণে সবচেয়ে জরুরি ভূমিকা রাখতে পারেন।” তালিবানের “দমনমূলক আইন”কে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ও নিন্দা করতে মুসলিম পণ্ডিত ও গবেষকদের ঐক্যবদ্ধ স্বর তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তালিবান কর্মকর্তারা এই সমালোচনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেননি। তারা তাদের শাসনব্যবস্থাকে জোরালোভাবে সমর্থন করতে গিয়ে বলেছেন, তারা শরিয়া ও আফগানিস্তানের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।