গ্রীনল্যান্ড অধিগ্রহণের ট্রাম্পের পরিকল্পনা উপক্ষো করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন

মনে করা হচ্ছে,যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের পুত্র ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রকে বহনকারী একটি বিমান গ্রীনল্যান্ডের নুকে পৌঁছেছে। ৭ জানুয়ারি, ২০২৫।

ডেনমার্কের স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল গ্রীনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সামরিক আক্রমণের বিষয়টি নাকচ করতে যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অস্বীকৃতিকে বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন অগ্রাহ্য করেছে এবং এটিকে “ বেপরোয়া আজগুবি বিষয়” বলে অভিহিত করেছে। ই.ইউ রাষ্ট্রগুলি এটা নিশ্চিত করেছে যে ট্রাম্প যদি সেই দ্বীপটিতে আক্রমণ চালান তা হলে সেটিকে রক্ষা করতে তারা বাধ্য হবে।

ধারাবাহিক ভাবে না হলেও দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি আবার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। তিনি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে খনিজ-সমৃদ্ধ সুমেরু অঞ্চলের এই দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ পরিহার করতে অস্বীকৃতি জানান। এর আগে তিনি ডেনমার্কের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের সংকল্প প্রকাশ করেন যদি দেশটি তার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে অস্বীকার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র ব্রাসেলস কেন্দ্রিক ২৭ দেশের এই ব্লক অবশ্য ট্রাম্পের সঙ্গে বাকযুদ্ধ এড়িয়ে গিয়ে বলেছে তারা আসন্ন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে “আগ্রহের সাথে অপেক্ষা” করছে।

গ্রীনল্যান্ডের দখল নেয়ার জন্য সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ পরিহার করতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতিতে ইউরোপীয় কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন,“আমরা এমন এক প্রশাসন সম্পর্কে অনুমান করে আজগুবি বিষয় নিয়ে কথা বলছি, যে প্রশাসন এখনও ক্ষমতায় আসে নাই”।

আরেকজন মুখপাত্র বলেন “নীতিগত ভাবে” দেশগুলির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।

যখন জানতে চাওয়া হয় যে গ্রীনল্যান্ড কি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা আইনের আওতায় পড়ে যেখানে আক্রমণের ক্ষেত্রে ই.ইউ সদস্যরা পরস্পরকে সহায়তা করতে বাধ্য,কমিশনের মুখপাত্রী পাওলা পিনহো বলেন, বিষয়টা তাই-ই।

তিনি বলেন,“তবে আমরা এমন একটা সম্পূর্ণ তাত্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলছি, যে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কিছু বলতে চাইবো না”।

খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ গ্রীনল্যান্ড হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল এবং ই.ইউর সহযোগী অঞ্চল।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যেই গ্রীনল্যান্ড দখলের কল্পনা করে এসেছেন। তিনি মঙ্গলবার বলেন,“জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই গ্রীনল্যান্ড আমাদের প্রয়োজন, তিনি যুক্তি দেন,“মুক্ত বিশ্বের সুরক্ষার জন্য” ডেনমার্কের উচিত্ হবে এটি ছেড়ে দেওয়া।

এই দ্বীপে খনিজ সম্পদ ছাড়াও, বিশেষত পৃথিবীতে উষ্ণতার কারণে এই শীর্ষ স্থানে যখন বরফ গলে যায় তখন এটি হচ্ছে সুমেরু অঞ্চলে জাহাজ চলাচলের প্রবেশ দ্বার।

দিনে আরও আগের দিকে ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যমে গ্রীনল্যান্ডের কর্তৃত্ব গ্রহণ সম্পর্কে লেখেন,“এ চুক্তি হতেই হবে” এবং তাঁর বড় ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের একটি ছবি পোস্ট করেন যিনি গ্রীনল্যান্ড সফর করছিলেন।

ট্রাম্প আরও লেখেন, “ মেক গ্রীনল্যান্ড গ্রেট আগেইন”।

পানামা ও কানাডা

ট্রাম্প তাঁর সংবাদ সম্মেলনে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ পরিহার করার বিষয়টি নাকচ করে দেন এবং প্রতিবেশি কানাডার সঙ্গে বানিজ্য চুক্তিগুলিতে সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে কানাডার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগ কিংবা দুটি দেশকে একটি দেশে পরিণত করার কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মার-এ-লাগোতে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন। পাম বীচ, ফ্লোরিডা। ৭ জানুয়ারি ২০২৫।

ট্রাম্প বলেন,“কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র- দারুণ ব্যাপার হবে। আপনি ওই কৃত্রিম রেখাটি সরিয়ে ফেলুন, দেখবেন দেখতে কেমন লাগে এবং এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও অনেক ভাল একটা ব্যাপার হবে”।

ট্রাম্প এমন সম্ভাবনার কথাও বলেন যে কানাডা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য । কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাত্ক্ষণিক ভাবে এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

ট্রুডো বলেন,“বিন্দুমাত্র, নরকেও এমন সম্ভাবনা নেই যে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে”।

জার্মানি ও ফ্রান্স

গ্রীনল্যান্ড দখলের প্রতি ট্রাম্পের প্রত্যাশা ই.ইউতো প্রত্যাখান করেছেই, ই.ইউর দুটি সদস্য রাষ্ট্র জার্মানি ও ফ্রান্সও পৃথক ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন এই নেতার কথাকে নাকচ করে দিয়েছে।

ট্রাম্পের এ রকম মন্তব্যে জার্মান চান্সালার ওলাফ শোলজ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ইউরোপীয় অংশীজনেরা এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন যে অলংঘনীয় সীমান্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের মূল নীতি।

শোলজ সংবাদদাতাদের বলেন,“এই নীতি প্রয়োগযোগ্য এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ শৃঙ্খলার মুল”।

অল্প সময়ের মধ্যে ডাকা এই সংবাদ সম্মেলনে শোলজ ব্যতিক্রমী ভাবে খোলামেলা বিবৃতিতে বলেন , “ আমাদের ইউরোপীয় অংশীজনদের সঙ্গে আমার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিবৃতি বুঝতে যে কিছুটা ভুল হচ্ছে সেটা বেরিয়ে এসেছে”।

শোলজ বলেন,“সীমান্ত যে অলংঘনীয় এই নীতি সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তা সে আমাদের পূর্বেই হোক কিংবা পশ্চিমে”। তিনি আরও বলেন প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালিয়ে রাশিয়া এই নীতি লংঘন করেছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারট ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে বলেন,“বিশ্বের অন্যকোন দেশকে, সে যেই হোক না কেন ইউরোপের স্বায়ত্ত্বশাসিত সীমান্ত লংঘন করতে দেবে ই.ইউ, এমন প্রশ্নই উঠতেই পারেনা। আমরা একটি শক্তিশালী মহাদেশ। আমাদের নিজেদেরকে আরও শক্তি অর্জন করতে হবে”।

ব্যারট বলেন তিনি বিশ্বাস করেন না যুক্তরাষ্ট্র সুমেরু দ্বীপটির উপর আক্রমণ চালাবে । এই দ্বীপটি ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডেনমার্কের অংশ।

তবে তিনি আরও বলেন,“আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি যখন শক্তিধরদের আইনই ফিরে এসেছে। আমরা কি ভয় পাবো? আমরা কি উদ্বেগের শিকার হবো? স্পষ্টতই না”। আমাদের জেগে উঠতে হবে এবং এই বিশ্বের প্রতিযোগিতায় আমাদের সামরিক দিক দিয়ে নতুন করে শক্তিশালী হতে হবে, যেখানে কেবল শক্তিধরদের আইনই চলে”।

ব্যারট বলেন তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্র “সহজাত ভাবে সাম্রাজ্যবাদী নয়” এবং বলেন তিনি,“মনে করেন না” এতে কোন পরিবর্তন আসছে।