যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ভয়ানক দাবানল বুধবার লস অ্যাঞ্জেলেসের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, একের পর এক মহল্লা পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় যাতে অন্তত দুজন প্রাণ হারিয়েছে।
একই সময়, এলাকার বেপরোয়া বাসিন্দারা আগুনের লেলিহান শিখা, তীব্র ঝড়ো হাওয়া আর ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ভেতর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। হলিউড সিনেমার সুবাদে বিখ্যাত মাইলফলকগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
যে তিনটি বড় দাবানল একদিন আগে বিস্ফোরণের মত শুরু হয়, তারা শহরকে একটি বিপজ্জনক ধোঁয়া আর ছাইয়ের মেঘে ঢেকে দেয় এবং এলাকাজুড়ে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে ভেতরে পাসাডেনা শহর পর্যন্ত।
তিনটি দাবানলের একটি ছিল লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী।
ক্যালিফোর্নিয়ার দমকল বাহিনীর সদস্যরা সমগ্র লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের লেলিহান শিখা নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দাবানলে বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ পালানোর চেষ্টা করায় সড়কগুলোতে বড় আকারে যানজট সৃষ্টি হয়েছে এবং জরুরি সরঞ্জাম ও উপকরণের ওপর সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন চাপ।
প্যাসিফিক প্যালিসেডসে ধ্বংসযজ্ঞ
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তর পূর্ব দিকে পাহারের পাদদেশে একটি প্রাকৃতিক প্রিজারভেটরি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুনের লেলিহান শিখা এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে বৃদ্ধনিবাস থেকে কয়েক ডজন বাসিন্দাকে হুইলচেয়ার ও হাসপাতালের শয্যায় বসিয়ে সড়ক পথে একটি পার্কিং লটে নিয়ে আসতে বাধ্য হন কর্মীরা।
ঘুমের পোশাক পরিহিত অবস্থায় বৃদ্ধনিবাসের বাসিন্দারা সেখানেই অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় তাদের আশেপাশে জ্বলন্ত কাঠ-কয়লা খসে খসে পড়ছিল। এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স, বাস ও নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ভ্যান এসে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে আরেকটি দাবানল শহরের প্যাসিফিক প্যালিসেডস মহল্লায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত এই পাহাড়ি এলাকায় অনেক তারকার ঘর-বাড়ি রয়েছে। এলাকাটিকে “সারফিন’ ইউএসএ” গানের কথায় অমরত্ব দিয়েছে বিচ বয়েস ব্যান্ড।
নিরাপদ অবস্থানে যেতে সবাই তাড়াহুড়া করলে সড়কপথ যানবাহন ও মানুষের চাপে স্থবির হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে অসংখ্য মানুষ তাদের গাড়ির মায়া ত্যাগ করে পায়ে হেঁটে পালাতে শুরু করেন। এ সময় অনেকের হাতে ছিল স্যুটকেস।
স্যান ফার্নান্দো ভ্যালির সিলমার নামের মহল্লায় স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটার দিকে তৃতীয় দাবানলের সূত্রপাত ঘটলে সেখান থেকে বাসিন্দারা পালাতে শুরু করেন। এটি লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে উত্তরের মহল্লা। তিন দাবানলের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
হাজার হাজার বাড়ি ধ্বংস
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে লস অ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগকে এক বিরল উদ্যোগ নিতে হয়। সংস্থাটি অফ-ডিউটিতে থাকা দমকলকর্মীদেরকেও কাজে যোগ দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানায়। বাতাসের বেগ এত বেশি ছিল যে দমকলবাহিনীর অগ্নিনির্বাপক বিমান উড়তে পারেনি, যার ফলে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই আরও ব্যাহত হয়।
প্যাসিফিক প্যালিসেডেসের দাবানলে কতগুলো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন, ৩০ হাজারের মতো বাসিন্দাকে নিজ নিজ অবস্থান ছেড়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ১৩ হাজারেরও বেশি স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, অনেক বাড়ি পুড়ে গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে প্রায় এক লাখ ৬৭ হাজার মানুষ প্রবল বাতাসের কারণে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট পাওয়ারআউটেজেস ডট ইউএস এই তথ্য জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় সকালের শেষভাগে প্যাসিফিক প্যালিসেডে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং অল্প সময়ের মধ্যে এটি ১১ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুন থেকে এত বেশি ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় যে তা সমগ্র লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে দৃশ্যমান ছিল।
আগুন ও প্রবল বাতাসে পূর্ণ আবহাওয়ার জন্য ফিল্ম স্টুডিওগুলো দুইটি সিনেমার প্রিমিয়ার শো বাতিল করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ইউনিফায়েড স্কুল ডিসট্রিক্ট বলছে, তারা প্যাসিফিক প্যালিসেড এলাকার তিন ক্যাম্পাস থেকে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।