দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বিধ্বস্তের স্থানটি পরিদর্শন করলেন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং তদন্তকারীরা

দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা সেই স্থানটি পরিদর্শন করছেন যেখানে জেযু এয়ার বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়ো জাহাজটি মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিধ্বস্ত হয়। মুয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ডিসেম্বর ৩১,২০২৪।

বোয়িংয়ের প্রতিনিধিসহ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীদের একটি দল মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল পরীক্ষা করেছেন। কর্তৃপক্ষ দেশটির বিমান সংস্থাগুলো পরিচালিত সমস্ত বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের সুরক্ষা ব্যবস্থা পরিদর্শন করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বাজেট এয়ারলাইন জেজু এয়ার পরিচালিত বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের ১৮১ জন আরোহীর মধ্যে দুজন ছাড়া বাকি সবাই রবিবারের দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, ল্যান্ডিং গিয়ার ছাড়াই বিমানটি দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কংক্রিটের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় ফেটে পড়ে।

বিমানটির ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা গিয়েছিল এবং প্রাথমিক পরীক্ষায় আরো বলা হয়, পাইলটরা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে পাখির আঘাতের সতর্কতা পেয়েছিলেন এবং একটি বিপদ সংকেতও জারি করেছিলেন। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ল্যান্ডিং গিয়ারের সমস্যায় সম্ভবত বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার মূল কারণ।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দেশে থাকা ১০১টি বোইং ৭৩৭- ৮০০ বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা শুরু করেছে। দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার পর্যন্ত চলা পাঁচদিনের নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার রেকর্ড খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ৮ জন তদন্তকারীর একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার দুর্ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেছে। এই দলে একজন ছিলেন ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনের, তিনজন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের এবং চারজন বোয়িংয়ের। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়নি।

জেজু এয়ারের প্রেসিডেন্ট কিম ই-বে মঙ্গলবার সংবাদদাতাদের বলেন, তার কোম্পানি আরো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী নিয়োগ করবে এবং বিমান পরিচালনার নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মার্চ পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনবে।

এমআইটির এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জন হ্যান্সম্যান বলেন, বিমানটির হাইড্রোলিক কন্ট্রোল সিস্টেমে সমস্যার কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এটি ল্যান্ডিং গিয়ার এবং ডানার ওঠা-নামা বিষয়টি সমন্বিত ভাবে মোতায়েন না করার কারণে” এবং হতে পারে নিয়ন্ত্রণের সমস্যার কারণেও, যাতে তাড়াহুড়ো করে বিমানটির অবতরণের একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ”

ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক নাজমেদিন মেশকাতি বলেন, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ম্যাক্সের ৭৩৭ ভার্সনের পূর্ববর্তী উড়োজাহাজ যেটি বহুল ব্যবহৃত উড়োজাহাজ এবং যার নিরাপত্তা রেকর্ড ভালো ছিল।

তিনি বলেন, লোকেশন সম্প্রচারের জন্য বিমান সিস্টেমের ব্যর্থতা, এর ল্যান্ডিং গিয়ার পরিচালনা এবং গতি ধীর করার জন্য ডানাগুলিকে প্রসারিত করা বৈদ্যুতিক এবং হাইড্রোলিক সিস্টেমগুলোকে প্রভাবিত করে এমন একটি বিস্তৃত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। ফ্লাইট ডাটা এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা কী ভুল হয়েছে তা জানতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।