আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বলছেন বিধ্বস্ত জেটলাইনারটিকে রাশিয়া অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত হেনেছে

আজারবাইজান এয়ারলাইন্স দুর্ঘটনার শিকার একজন পাইলট আলেকজান্ডার কালিয়ানিনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের দেয়ালে আজারবাইজানের জাতীয় পতাকা, ফুল এবং মোমবাতি রাখা হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ রবিবার বলেন, আজারবাইজানের বিমান যেটি গত সপ্তাহে বিধ্বস্ত হয়েছে তা রাশিয়া গুলি করে ভুপাতিত করেছিল, যদিও তা অনিচ্ছাকৃতভাবে করা হয়। তিনি মস্কোকে দিনের পর দিন এই বিষয়টি "চেপে রাখার" চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করেন।

তিনি আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, "আমরা স্পষ্টভাবে বলতে পারি যে বিমানটি রাশিয়ার ছোঁড়া গুলিতে ভুপাতিত হয়। আমরা বলছি না যে এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, তবে এমনটি করা হয়েছে।"

আলিয়েভ বলেন, কাজাখস্তানে বুধবার বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটিতে রাশিয়ার ভূখণ্ড থেকে গুলি করা হয় এবং বিমানটি "ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশলের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।" আলিয়েভ রাশিয়াকে কয়েকদিন ধরে এই বিষয়টি "চেপে রাখার" চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করেছেন, এবং তিনি বলেছেন যে রুশ কর্মকর্তাদের দ্বারা উপস্থাপিত ঘটনার বিভিন্ন ব্যাখ্যায় তিনি "বিস্মিত এবং হতাশ"।

তিনি বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত, প্রথম তিন দিন আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই শুনিনি।"

দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ৬৭ জনের মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়। ক্রেমলিন বলেছে, বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী রুশ প্রজাতন্ত্রের চেচনিয়ার আঞ্চলিক রাজধানী গ্রোজনির কাছে ইউক্রেনের ড্রোন হামলাকে প্রতিহত করার জন্য গুলি চালাচ্ছিল। সেখানেই বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে।

আলিয়েভ বলেন, আজারবাইজান বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় রাশিয়ার কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছে।


তিনি বলেন, "প্রথমত, রাশিয়াকে আজারবাইজানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের অবশ্যই অপরাধ স্বীকার করতে হবে। তৃতীয়ত, দোষীদের শাস্তি দিতে হবে, তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে এবং আজারবাইজান রাষ্ট্র, আহত যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।"

আলিয়েভ বলেন, প্রথম দাবিটি "ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে" যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার তার কাছে ক্ষমা চান। পুতিন দুর্ঘটনাটিকে একটি "দুঃখজনক ঘটনা" বলে অভিহিত করেন, কিন্তু তিনি মস্কোর দায় স্বীকার থেকে বিরত ছিলেন।

রবিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দ্যমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, পুতিন আলিয়েভের সাথে আবার ফোনে কথা বলেছেন, তবে কথোপকথনের বিষয়ে বিশদ কোনও বিবরণ দেননি।

ক্রেমলিন আরও বলে, কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে দুর্ঘটনাস্থলে রাশিয়া, আজারবাইজান এবং কাজাখস্তানের যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। বিমানটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে গ্রোজনির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু, বিমানটি তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য থেকে কাস্পিয়ান সাগরের কয়েকশ কিলোমিটার (মাইল) দূরে কাজাখস্তানের দিকে মোড় নেয়, এবং সেখানে অবতরণের চেষ্টা করার সময় বিধ্বস্ত হয়।

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী এবং ক্রুরা আজারবাইজানি সংবাদাতাদের বলেন, তারা গ্রোজনির উপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করার সময় বিমান থেকে বিকট শব্দ শুনতে পান।

শুক্রবার রাশিয়ার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ রোসাভিয়াতসিয়ার প্রধান দ্যমিত্রি ইয়াদ্রভ বলেন, যখন বিমানটি ঘন কুয়াশার মধ্যে গ্রোজনিতে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ইউক্রেন শহরটিকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালাচ্ছিল, যার ফলে কর্তৃপক্ষ এলাকাটিতে বিমান চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

দুর্ঘটনাটি ইউক্রেনের যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত দ্বিতীয় মারাত্মক বেসামরিক বিমান দুর্ঘটনা। ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭-কে মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় রাশিয়ার ভূখণ্ড থেকে বায়ু ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছিল, এতে ২৯৮ জন আরোহীদের সকলেই নিহত হয়।

রাশিয়া এর দায় অস্বীকার করে, তবে একটি ডাচ আদালত ২০২২ সালে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি থেকে ইউক্রেনে আনা একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে বিমানটি ভূপাতিত করতে তাদের ভূমিকার জন্য দুইজন রুশ এবং একজন রাশিয়াপন্থী ইউক্রেনীয় ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে।