বিডিআর বিদ্রোহের সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে: তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান

বিজিবি সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস। বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) বিদ্রোহের সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত করতে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিজিবি সদর দফতরের ঢাকা ব্যাটালিয়নের (৫ বিজিবি) সম্মেলন কক্ষে কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা এই দায়িত্বকে অতি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আমরা আমাদের বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে নিরপেক্ষভাবে যে তিন মাস সময় আমাদেরকে দেওেয়া হয়েছে তার ভেতরেই তদন্ত শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা কোনো রকম পক্ষ নেব না। কোনো কিছুতে আমরা প্রভাবিত হবো না।”

তিনি বলেন, “যেহেতু এটা একটা জাতীয় সমস্যা, হাজার বছরেও এরকম ঘটনা ঘটেনি। সামান্য সময়ে এত মানুষ নিহত হয়েছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে জানাতে চাই- যারা এই বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হয়েছেন, নিগৃহীত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন, সব কিছুকে আমরা নজরে নেব। সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা তাদের ক্ষতকে নিরাময় করার চেষ্টা করব।”

ফজলুর রহমান বলেন, কিছু চিঠিপত্র আমাদেরকে লিখতে হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা জানিয়েছি যে, আমাদের এখানে সাচিবিক সুবিধা দিতে হবে। অফিস দিতে হবে। “আমাদের নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ট্রান্সপোর্ট সুবিধা দিতে হবে,” তিনি যোগ করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো দেশকে দায়ী করতে চাই না। ৫ অগাস্টের পর দেশ থেকে অনেকেই চলে গেছেন। প্রয়োজনে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেসব দেশে টিম পাঠাব।”

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কী ঘটেছিল পিলখানায়?

২০০৯ সালে তিন দিনব্যাপী 'বিডিআর সপ্তাহ' চলার সময় ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা সদর দফতরের দরবার হলে বিডিআরের কয়েক শ সদস্য সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার ও বিডিআর বিদ্রোহীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড জমা দেয়ার মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। সেই ঘটনায় মোট ৫৮টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে একটি হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগে, বাকিগুলো বিদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা হয়।

হত্যা মামলার বিচারে, ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ২৭৭ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পান।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৬২ জন বিদ্রোহীকে ৩ মাস থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, বিদ্রোহের ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জন বিডিআর জওয়ানকে ৪ মাস থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।