২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এর আগে রাতেই কারা মুক্তির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছে।
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অভিযুক্ত ছিলেন দিনি। এই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং অভিযুক্তদের আপিল মঞ্জুর করে ১ ডিসেম্বর এ রায় দেওয়া হয়।
সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু কারাগার থেকে বের হয়ে আসার সময় কারাগারের গেটে তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় করা মামলায় মামলায় গ্রেফতার হন আব্দুস সালাম পিন্টু। পরে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম পিন্টু ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে তিনি উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
কী ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ।
শোভাযাত্রার আগে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা শেষ করে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার সময় ঘটে পর পর ২টি বিস্ফোরণ।
এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। এরই মধ্যে শোনা যায় গুলির আওয়াজ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা তখনো ভয়াবহতার মাত্রা বুঝে উঠতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এগোতেই তারা দেখতে পান শত শত জুতো, স্যান্ডেল রাস্তায় ছড়ানো। তারই মধ্যে পড়ে রয়েছে মানুষের রক্তাক্ত নিথর দেহ; আহতদের আর্তনাদে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।
হামলায় আহতদের সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা যখন ছুটে যায়, তখন পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ সে সময় হামলার আলামত সংগ্রহ না করে তা নষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছিল বলে পরে অভিযোগ ওঠে।
সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ অগাস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।
২১ অগাস্ট হামলায় নিহত অন্যরা হলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। একজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
মঞ্চে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিস্ফোরণে মধ্যে মানববর্ম তৈরি করায় সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।