সিরিয়ার নিখোঁজ লোকদের নিয়তি জানার জন্য মেক্সিকোর আইনজীবিকে নিয়োগ করছেন জাতিসংঘের প্রধান

ফাইল- দামেস্কের আল-মোজতাহেদ হাসপাতালের মর্গের বাইরে দেওয়ালে টানানো ছবি দেখে লোকজন নিখোঁজ কিংবা মৃত লোকের সন্ধান করছেন। সিরিয়া, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার জানান যে সিরিয়ায় যে হাজার হাজার লোক নিখোঁজ এবং বাধ্যতামলক ভাবে যাদের গুম করা হয়েছে তাদের নিয়তি জানতে একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রধান হিসেবে তিনি মেক্সিকোর ন্যশনাল সার্চ কমিশনের প্রাক্তন প্রধানকে নিয়োগ দিচ্ছেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, “ যারা অনিশ্চয়তার কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন আমরা তাদের সহযোগিতা করতে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি”।

২০২৩ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সিরিয়ায় নিখোঁজ লোকদের ব্যাপারে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠন করে। তাদের বাধ্যতামূলক কাজ হচ্ছে সিরিয়ার সকল নিখোঁজ লোকের অবস্থান ও তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা বের করা করা এবং যাঁরা বেঁচে গেছেন এবং নিখোঁজদের পরিবারসহ সকল ভুক্তভোগীকে সহায়তা প্রদান করা।

গুতেরেস সংবাদদাতাদের বলেন, “ আমি আজ মেক্সিকোর কার্লা কুইয়ান্টানাকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করছি। তিনি এবং তাঁর টিমকে তাঁদের দায়িত্ব পুরোদমে পালন করতে দিতে হবে”।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত কুইন্টানা মেক্সিকোতে নিখোঁজ লোকজনের জন্য প্রতিষ্ঠিত কমিশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে প্রধানত সংগঠিত অপরাধের কারণে ১,১০,০০০ ’এরও বেশি লোক নিখোঁজ তলিকায় ছিলেন।

মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবি ও অধ্যাপিকা, ৪৬ বছর বয়সী কুইন্টানার সামনে বিশাল কাজ রয়েছে। দ্য সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউমান রাইটস বা এসএনএইচআর বলছে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হবার সময় থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ১,৫৭,৬৩৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন।

৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের সময় থেকে দেশের অনেক স্থানে কারাগারের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে এবং হাজার হাজার বন্দি মুক্ত হয়েছে। গণকবরও পাওয়া গেছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তাদের হাজার হাজার প্রিয়জনের বিষয়ে জানতে চাইছেন যাদের এখনও কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

গত সপ্তাহে ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এসএনএইচআর ‘এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ফাদেল আব্দুল গণি বলেন এখনও ১,০৫,০০০ লোকের হিসেব পাওয়া যায়নি এবং সংগঠনটি মনে করে তাদের মধ্যে “অধিকাংশই” বেঁচে নেই।

রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন

জাতিসংঘ প্রধান সিরীয়দের নেতৃত্বে একটি “ অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপর জোর দিয়ে বলেন তাদেরকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে, নইলে অগ্রগতি নষ্ট হবার ঝুঁকি তৈরি হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ সেখানে নতুন পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে দেশটির ভেতরে মানবিক প্রয়োজনে সাড়া দিচ্ছে। গুয়েতেরেসের মানবিক বিষয়ের নতুন প্রধান টম ফ্লেচার এই সপ্তাহে সরাসরি দামেস্ক, আলেপ্পো এবং হমস’এ গেছেন।

১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ায় ইতোপূর্বেই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে তাদের মোট জনসংখ্যার ৭০% ‘এরও বেশি, এক কোটি সত্তর লোক, সরবরাহের ঘাটতির কারণে সহযোগিতা ও অর্থায়নের প্রয়োজন অনুভব করছেন।

জাতিসংঘ প্রধান হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে যুদ্ধ শেষ হতে “ এখনও অনেক বাকি”। তিনি উত্তরে “বড় রকমের বৈরিতা”, সিরিয়ার “ বহু অংশে” ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের হুমকি এবং ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমি ও সিরিয়ার অবশিষ্ট এলাকায় মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের টহলের সময়্ওে ইসরায়েলের বিমান আক্রমণ ও সামরিক বাহিনীর চলাচলের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

ইসরায়েলি আক্রমণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ হচ্ছে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতা লংঘন। তাদের থামা উচিত্। ইসরায়েলের এই আক্রমণে রাসায়নিক অস্ত্র সম্ভার ও সিরিয়ার সম্পূর্ণ নৌবাহিনীসহ , সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে”।

গুতেরেস বলেন, “সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক ঐক্য ও অখন্ডতা পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং অবিলম্বে সব ধরণের আগ্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। এটি হচ্ছে চূড়ান্ত এক মূহুর্ত- আশা ও ইতিহাসের চূড়ান্ত মূহুর্ত , কিন্তু প্রচুর অনিশ্চয়তারও মূহুর্ত”।