যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার রিপাবলিকান সেনেটার মার্কো রুবিও সঙ্গে সরাসরি “অর্থবহ” বৈঠক করেছেন। সেনেটর রুবিওকে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন। ট্রাম্পের দল যখন উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন ঠিক সেই সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সংবাদ ব্রিফিং এর সময়ে সংবাদদাতাদের বলেন, “ এটি ভালো, গঠনমূলক ও অর্থবহ আলোচনা ছিল”।
তিনি আরও বলেন, “ জানুয়ারির ২০ তারিখে সন্দেহাতীত উত্তরণে সমর্থন দিতে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত”।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে,চীন রুবিও এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাঁকে এই বলে বর্ননা করেন যে “হংকং সম্পর্কিত বিষয়ে” তাঁর আচরণ ছিল, “নিন্দনীয়”। ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে রুবিও ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন তাঁর পদায়ন নিশ্চিত হলে, তিনি “ কিছু সমাধান পাবার ব্যাপারে” তাঁর নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত।
তাঁর কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় যে তিনি কি পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে তাঁর আগেকার অবস্থানেই থাকবেন, “ প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করেন, আর পররাষ্ট্র দপ্তরে আমাদের কাজ হলো তা বাস্তবায়ন করা”।
চীন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতীতে রুবিওর আইনি কর্মতৎপরতা ও প্রকাশ্য বিবৃতি সম্পর্কে এক নজর:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিকে নিরাপদ রাখা
সেপ্টেম্বর মাসে “ দ্য ওয়ার্ল্ড চায়না মেড” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে রুবিও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, “ স্মরণকালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যাদের বৈরিতার মুখোমুখি হয়েছে, কমিউনস্ট চীন হচ্ছে তাদের মধ্যে সব চেয়ে শক্তিশালী”।
ওই প্রতিবেদনে জোর দিয়েই বলা হয় যে “ বাজারকে অস্থিতিশীল করা ভর্তুকি প্রদানের” এবং “ অব্যাহত চুরির” মাধ্যমে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প ঘাঁটিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
রুবিও জোর দিয়ে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা, সিইও এবং বিনিয়োগকারীদের, “ আমাদের দেশের পুননির্মাণে , চীনের চ্যালেঞ্জকে কাটিয়ে তুলতে এবং আগামি প্রজন্মের জন্য স্বাধীনতার আলো প্রজ্জ্বলিত রাখার” জন্য “ সম্পুর্ণ সমাজকে প্রচেষ্টা” চালাতে হবে।
রুবিও যুক্তরাষ্ট্র-চীন গবেষণা সহযোগিতার একজন সোচ্চার সমালোচক এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে করদাতাদের অর্থ আমাদের অজান্তেই লুকোনো প্রযুক্তি, সেমি-কন্ডাক্টার ও সাইবার সিকিউরিটির মতো চীনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত এলাকাকে সহায়তা দিয়েছে আর এর ফলে বেইজিংকে কৌশলগত সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
রুবিও ২০২১ সালের দ্বিদলীয় সিকিউর ইকুইপমেন্ট অ্যাক্ট’এর পক্ষে কথা বলেছেন যে আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে হুয়াওয়ি ও জিটিই’র মতো চীনা কোম্পানীগুলিকে নতুন সাজসরঞ্জামের লাইসেন্স প্রদান নিষিদ্ধ করেছে । যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলি এই চীনা কোম্পানীগুলিকে নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বলে মনে করেছে।
চীনের “সব চেয়ে সুবিধা পাওয়া দেশ” ‘এর মর্যাদা বাতিল
রুবিও হচ্ছেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে একজন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের স্থায়ী স্বাভাবিক বানিজ্য সম্পর্ক বা পিএনটিআর বাতিলের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সাধারণত “সব চেয়ে সুবিধা পাওয়া দেশ” বা পিএনটিআর ‘এর মানে হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত চীনা পণ্য শুল্ক ও অন্যান্য বিধিনিষেধের ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে।
২০২২ সালে ওয়াশিংটন ভিত্তিক হেরিটেজ ফাউন্ডেশানে দেওয়া এক ভাষণে রুবিও তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন যে মুক্ত বানিজ্য ও বিশ্বায়ন চীনকে বদলে দিবে এমনটি মনে করা “গত সিকি শতাব্দির সব চেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক ভুল”।
তাঁর যুক্তি ছিল “ গত দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, আমাদের প্রস্তুত করার সক্ষমতা এবং আমাদের চাকরিকে চুরি করে আমাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে খর্ব করে”।
তা ছাড়া রুবিও চীনের মানবাধিকার ও তাইওয়ানের উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগেরও একজন সোচ্চার সমালোচক।