মেহেরপুরে তাপমাত্রা নেমেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কয়েক দিনের অব্যাহত শীতে জুবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে নামছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে চারদিক। এই সময়ে দরিদ্র শীতার্ত মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, “শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) আকাশে কুয়াশা রয়েছে ও নিম্নচাপের কারণে আকাশ মেঘলা। শনিবারও একই আবহাওয়া থাকতে পারে। শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে।”
কয়েক দিন ধরেই মেহেরপুরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার সময় চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। যা চলতি বছরে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
বুধবারও তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯৭ শতাংশ।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, এখন থেকে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা আরও কমবে। কয়েক দিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহও শুরু হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর একটু আগেই শীত পড়া শুরু করেছে মেহেরপুর জেলায়। ৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) এই এলাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ৭ ডিসেম্বর (শনিবার) ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলোকে গতি কমিয়ে এবং হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড শীতে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকুলও জবুথবু হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় করছে।
এদিকে গত কয়েকদিনের হাড় কাঁপানো শীতে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতজনিত কারণে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে (৫ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত) শীতজনিত কারণে জেলায় ১৩৫০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৮০ জন শিশু, ৫৫৯ জন নারী ও ৪১০ জন পুরুষ।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গেল এক সপ্তাহে ২৮৮ জন শিশু, ৩৮০ জন নারী ও ৩০৫ জন পুরুষ রোগী শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের গত এক সপ্তাহে শীতজনিত কারণে ১০৮ রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৪ জন শিশু, ৫৬ নারী ও ১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এ ছাড়া, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গত এক সপ্তাহে শীতজনিত কারনে ২৩৫ জন রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৯০ জন শিশু, ১০৩ জন নারী ও ৪৯ জন পুরুষ।
জেলায় তিন লাখেরও অধিক মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কম্বল বা গরম কাপড় জোটেনি। তবে, কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েক জায়গায় সামান্য শীতবস্ত্র বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক, চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ রোগীই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। শীতজনিত রোগ যেমন- সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। যার অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। শিশুদের উষ্ণ স্থানে রাখা ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসময়টায় যতটা সম্ভব ঘরের ভেতর থাকা এবং শরীরকে সবসময় গরম রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন চিকিৎসক মহীউদ্দীন জানান, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। সে কারণে স্বাস্থ্য কর্মীদের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সিফাত মেহনাজ জানিয়েছেন, শীতার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত কম্বল, গরম কাপড় বা নগদ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। শুধু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) আশা থেকে ৪০০ কম্বল পাওয়া গেছে। সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে। তবে, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। মেহেরপুর জেলা পরিষদ থেকে ২৫ লাখ টাকার কম্বল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে রেকর্ড করা হয়, যা গত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর গত শীতে তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যেটা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস।