ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি সোমবার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে সে দেশে পশ্চিমা সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাবনা নিয়ে তার আপত্তি নেই।
জেলেন্সকি বার্তাবাহী অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্ট করে বলেছেন, এই সৈন্য মোতায়েন নেটোতে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার একটা ধাপ।
তিনি আরও বলেন, “তবে তার আগে, আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে, ইউক্রেন কবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোর অন্তর্ভুক্ত হবে।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাতের অবসান ঘটানোর পথ খুঁজতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার মধ্যে জেলেন্সকির এই প্রস্তাব এক সূক্ষ্ম কূটনৈতিক পথের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। উল্লেখ্য, চলমান লড়াইয়ে রাশিয়া যখন ভাল অবস্থান লাভ করেছে সেই সময় এমন প্রস্তাব দিলেন জেলেন্সকি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চাইছেন এবং শনিবার তিনি প্যারিসে জেলেন্সকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে, জেলেন্সকি সোমবার বলেছেন, নেটোতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য সদস্যপদ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করবেন কারণ এখনও তিনি দায়িত্বে রয়েছেন এবং এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার “আইনি অধিকার” এখনও ট্রাম্পের নেই।
রবিবার প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক পোস্টে ট্রাম্প জেলেন্সকি সম্বন্ধে বলেছেন, “তিনি যুদ্ধবিরতি চাইছেন। তিনি শান্তি চান। আমরা বিশদ কথা বলিনি।”
ট্রাম্প উল্লেখ করেন, পুতিনের বাহিনী ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষতির মুখে রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি ভাবছি কীভাবে এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করা যায়।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমা সৈন্যদের ইউক্রেনের মাটিতে মোতায়েন করার ভাবনাটি উত্থাপন করেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে, এতে সংঘাত বৃদ্ধির পুরনো আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এই আশঙ্কার কারণেই পশ্চিমা নেতারা অস্ত্র সরবরাহ ও এই অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুমতিকে সীমিত করেছেন।
ইউরোপের সামরিকভাবে শক্তিধর দেশ যেমন জার্মানি ও পোল্যান্ড তাৎক্ষণিকভাবে বলেছে, তারা ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না। কোন কোন দেশ ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, কিছু “কৌশলী রহস্যময়তা” বজায় রাখতে চান।
এদিকে, জার্মানির আসন্ন নির্বাচনে চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের প্রতিদ্বন্দ্বি ফ্রিডরিক মার্জ বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে জার্মানিতে “প্রাথমিক ঐক্যমত্য” রয়েছে।
তবে, কিয়েভে সফরকালে তিনি শোলজের সঙ্গে তার পার্থক্যগুলিকে তুলে ধরেছিলেন। শোলজ ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টরাস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে অস্বীকার করেছেন কেননা পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ রুখতে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে জোর দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার ক্ষেত্রে মার্জের কোনও আপত্তি নেই এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ইউক্রেনকে অনুমতিও দিতে চান তিনি।
জেলেন্সকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্জ উল্লেখ করেন, বর্তমান জার্মান সরকারের থেকে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন।