বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেখতে চায় ইইউ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে। ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের 'শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক' উত্তরণের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।

তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠকে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।

ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মিলার দুই দেশের সম্পর্ক আরও বাড়ানোর জোরালো সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন, "এটি আমাদের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে এবং একটি নতুন বিস্তৃত অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।"

রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ তাদের চলমান সংলাপ ও সহযোগিতাকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করে।

তিনি বলেন, উত্তাল গ্রীষ্মকালে সরকার পরিবর্তনের পর সুদূরপ্রসারী সংস্কারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের পথে যাত্রা শুরু করেছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, "পেছনের দিকে তাকালে, আমরা হস্তান্তরের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানাই। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইইউ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আমাদের সাধ্যমতো সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

তিনি বলেন, "গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ইইউ'র সমর্থন ও অঙ্গীকারের নিদর্শন হিসেবে তারা এসব ইস্যুতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।"

তিনি বলেন, "আমরা জোর দিয়ে বলছি যে, ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে মানবাধিকারের বিষয়ে সকল পর্যায়ে এবং সব ফোরামে সংলাপ চালিয়ে যেতে চায়।"

সংস্কারের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং এটাও পরিষ্কার করতে চাই যে, তারা তহবিল, সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ সংগ্রহসহ প্রাসঙ্গিক সুপারিশগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর বা তারও আগে বাস্তবায়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

মিলার বলেন, "আমরা এটিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হিসাবে দেখছি।"

তিনি বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট, অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারের উত্থানের দিকেও নজর দিচ্ছেন, যার চারপাশে বিস্তৃত রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ইইউ খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, "এটি একটি 'টিম ইউরোপ' পদ্ধতি গ্রহণ, হস্তক্ষেপের সমন্বয় এবং তারা সময়োপযোগী এবং প্রভাবশালী তা নিশ্চিত করা হিসাবে পরিচিত। আমাদের অনেক আহ্বান আছে, কিন্তু কেবল একটি বার্তা আছে।"

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভিসার কার্যক্রম দিল্লি থেকে সরানোর অনুরোধ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

বৈঠকে ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদেরকে বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান।

ভারতে আপাতত বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা দেয়া হচ্ছে, এতে অনেক শিক্ষার্থীই দিল্লি গিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসা নিতে পারছেন না, এই সমস্যার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।”

বিকল্প ভিসা অফিসের পরামর্শ দেন তিনি, “ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশি কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।”

বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন, তিনি জানান, ইতোমধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে নেয়া হয়েছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।