গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে, বলছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য আর্তি শিশুদের; গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে। ফটোঃ ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক নতুন রিপোর্টে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। ইসরায়েল এই অভিযোগকে “সম্পূর্ণ ভুল ও মিথ্যা-নির্ভর” বলে অভিহিত করেছে। পাশাপাশি তারা এই মানবাধিকার সংস্থাকে “শোচনীয় ও ধর্মান্ধ সংগঠন” হিসেবে নিন্দা করেছে।

লন্ডন-ভিত্তিক এই গোষ্ঠী বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিদ্ধান্তে এসেছে, ইসরায়েল ও তাদের সামরিক বাহিনী ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ-সম্পৃক্ত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ লঙ্ঘন করেছে। এই কনভেনশন “কোনও জাতি, জনজাতি, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে চালানো কার্যকলাপকে” গণহত্যা বলে সংজ্ঞায়িত করেছে।

প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস জঙ্গিদের অতর্কিতে হামলার পর থেকে শুরু হওয়া ৯ মাসের ঘটনাবলিকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, হামাসের ওই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং আরও ২৫০ জন জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পাল্টা জবাবে ফিলিস্তিনি ছিটমহলে স্থল ও আকাশপথে ব্যাপক অভিযান ও হামলা চালায় ইসরায়েল।

অ্যামনেস্টি বলেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের শত শত “অমানবিক ও গণহত্যামূলক বিবৃতি” ও গাজার গ্রাউন্ড রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্তে এসেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর ও ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে ইসরায়েল ১৫টি বিমান হামলা চালিয়েছে এবং এতে ১৪১ জন শিশুসহ ৩৩৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়েছে—এমন কোনও প্রমাণ নেই।

এই গোষ্ঠী বলেছে, “মন্থর ও হিসেবনিকেশ করে মৃত্যু”র মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করতে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি মধ্যে রয়েছে গণহারে এলাকা খালি করার নির্দেশ; এতে গাজার ২৩ লক্ষ মানুষের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে; এবং মানবিক ত্রাণ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা।

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এই প্রতিবেদনে বলেছেন, এই গোষ্ঠীর অনুসন্ধান ও তথ্য “আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলিকে জাগানোর আহ্বান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে: এটা গণহত্যা।”

ক্যালামার্ড বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য যে সব দেশ ইসরায়েলকে অস্ত্র দিচ্ছে তারা গণহত্যার দোসর হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে এক বিবৃতি পোস্ট করে এই প্রতিবেদনকে “বানানো” বলে নিন্দা করেছে এবং বলা হয়েছে, হামাসই ৭ অক্টোবরে “গণহত্যামূলক তাণ্ডব” চালিয়েছে। এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তারপর থেকে “আন্তর্জাতিক আইন সম্পূর্ণভাবে মেনে সাতটি আলাদা ফ্রন্ট থেকে দৈনিক হামলা”র বিরুদ্ধে ইসরায়েল নিজেকে রক্ষা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।