বাইডেনের অ্যাঙ্গোলা সফর: প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম আফ্রিকা ভ্রমণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জাঁও লোরেন্সোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বৈঠকের আগে করমর্দন করছেন। লুয়ান্ডা, ৩ ডিসেম্বর,২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথম, এবং নিশ্চিত ভাবে তাঁর চূড়ান্ত, আফ্রিকা ভ্রমণে অ্যাঙ্গোলার গোলাপি প্রাসাদে উষ্ণ সম্বর্ধনা লাভ করেন।

লাল-গালিচা এই সম্বর্ধনায়, সামরিক ব্যান্ডে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়, তিনি সৈন্যদের পরিদর্শন করেন এবং ২১ বার তোপধ্বণির মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়। তার পর কূটনীতিকদের নিয়ে তিনি এবং অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জাঁও লোরেন্সো বৈঠকে বসেন।

বাইডেন লোরেন্সোকে বলেন, “প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাঙ্গোলা সফরে আসতে পেরে আমি গর্বিত এবং আরও বেশি গর্বিত যে আমরা একই সঙ্গে আমাদের সহযোগিতাকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতদে পেরেছি। আরও অনেক কিছু আমাদের সামনে আছে, আরও অনেক কিছু করার রয়েছে”।

তাঁর প্রশাসনের আফ্রিকা বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন যে বাইডেন অ্যাঙ্গোলাকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বিত সম্পর্ককে “ প্রথম প্রদর্শনযোগ্য” বিষয় বলে মনে করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের আফ্রিকা বিষয়ক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ফ্রান্সেস ব্রাউন বলেন, “ আমরা, যুক্তরাষ্ট্র অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। একটি হচ্ছে পূর্বাঞ্চলে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে শান্তি ও নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলা। আরেকটি হচ্ছে ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি করা। তৃতীয়টি হচ্ছে প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা”।

অ্যাঙ্গোলার দূর্বল মানবাধিকার রেকর্ড সম্পর্কে বাইডেন , অন্তত প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। অধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল এই পরিস্থিতির সার সংক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউ এস এ ‘র আফ্রিকা বিষয়ক অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টার কেইট হিক্সন জুমের মাধ্যমে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ অ্যামনেস্টি বার বার তুলে ধরেছে যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে অতিরিক্ত প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই সব বিক্ষোভে যে কেবল প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তাই-ই নয়, ভুক্তভোগীদের পরিবার, এমন কী বিচারও চাইতে পারে না। তা ছাড়া আমরা দেখছি ২০২০ সাল থেকে অনেকগুলো নিপীড়নমূলক আইন পাশ করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে সেখানে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করা অবৈধ। অতি সম্প্রতি, এই বছরেই দু’টি আইন অনুমোদন লাভ করেছে যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি স্বরূপ”।

ব্রাউন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে প্রেসিডেন্ট সব সময়ে একান্ত ভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ তিনি কখনই তার সহ-পক্ষের সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলতে কুন্ঠিত হন না। আর আমার মনে হয় সরকারি কাজের এই দীর্ঘ সময় ধরে, এ ব্যাপারে তিনি এক রকমই থেকেছেন।

অ্যাঙ্গোলার বিরোধী গোষ্ঠীগুলি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছে যে নাগরিক সমাজের উদ্বেগের বিষয়য়ে শোনার একটি “ বড় রকমের সুযোগ” হারিয়েছেন বাইডেন।

বিরোধী ইউনিটা দলের এরনেস্টো মুলাটো বলেন, “ অ্যাঙ্গোলায় বাইডেনের সফরের একমাত্র উদ্বেগ হচ্ছে , লাবিতো রেল করিডর”।

অ্যাঙ্গোলা ও আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে গভীর ও বেদনাদায়ক রক্তের সম্পর্কের বিষয়টিও বাইডেন উল্লেখ করেন যখন তিনি দেশটির দাসত্ব সম্পর্কিত জাদুঘর পরিদর্শন করেন। অ্যাঙ্গোলা এক সময়ে এই নতুন বিশ্বে দাস পাঠানোর শীর্ষ উৎস ছিল ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন , লুয়ান্ডার কাছে মোরো দ্য ক্রুজ’ এ সেখানকার ন্যাশনাল স্লেভারি মিউজিয়ামে ভাষণ দেওয়ার সময়ে অ্যাঙ্গোলার পতাকা উড়ছে। ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪।

হোয়াইট ওয়াশ জাদুঘরের সামনে আলোঝলমল উপসাগরের সামনে সূর্যাস্তের সময়ে বাইডেন তাঁর ভাষণে দাসত্বকে তাঁর দেশের, “মৌলিক পাপ” বলে বর্ণনা করেন “ যা আমেরিকার মনে বার বার ঘুরে আসে এবং সেই যুগ থেকেই গভীর ছায়াপাত করে আসছে”।

তবে তিনি তাঁর ভাষণে আশাবাদী চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর ভাষণের সময়ে সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে রংধনু দেখা যায়।

বুধবার বাইডেন বন্দরনগরী লোবিটোতে যাবেন যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে নির্মিত একটি নতুন রেল লাইন ধরে আফ্রিকার অভ্যন্তর থেকে কাঁচা মাল নিয়ে আসা হয়।