সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অব্যাহত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র: স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া অব্যাহত পদক্ষেপগুলো কে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র এ কথা জানান।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কথিত 'নিষ্ক্রিয়তা'র অভিযোগের ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে দেখছে, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার করা এ প্রশ্নের জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠানো এক ইমেইলে এ কথা জানানো হয়।

মুখপাত্র জানান, "আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর সহিংসতা ও তাদের প্রতি অসহিষ্ণুতার যেকোন ঘটনার নিন্দা জানাই এবং বাংলাদেশের সব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া অব্যাহত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাই।"

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের যে ঘটনাগুলো ঘটছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে জানানো হয়, "যুক্তরাষ্ট্র ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন ( করার স্বাধীনতা কে ) মৌলিক স্বাধীনতা হিসেবে সমর্থন করে। আমরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সহ আমাদের সকল অংশীদারদের কাছে সেই সমর্থনের কথা জানাই।"

এ বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ৪ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

ঐক্য পরিষদ তাদের প্রতিবেদনে বলে, ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে ৯ জনকে হত্যার ঘটনা আছে। ধর্ষণ/গণধর্ষণ করা হয়েছে ৪ জনকে, ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে; বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৯১৫টি; ৯৫৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে; বসতবাড়ি দখল হয়েছে একটি; এছাড়া, ৩৮টি শারীরিক নির্যাতন এবং ২১টি জমি/ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।

সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস

ইসকন ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস

বাংলাদেশে ইসকনকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" হিসেবে ঘোষণা করার দাবি ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন না পাওয়া প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জানান, "বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ও সংবিধানে ( নাগরিকদের ) যে অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তার আলোকে এ ইস্যুগুলো সমাধান করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের।

আমরা বাংলাদেশসহ সকল দেশকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য আহ্বান জানাই।"

ওদিকে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানিতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী ২ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে আদালত।

২৬ নভেম্বর করা রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।

এ ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা।

টানা কয়েক ঘণ্টার বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যায়।

সংঘর্ষের সময় সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলামকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন কুপিয়ে হত্যা করে। আহত আরও ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বুধবার হাইকোর্টে তুলে ধরা হয়।

ইসকনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয় ২৭ নভেম্বর।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন

বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা তৈরি হওয়ার আলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রোমোটে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে প্রশ্ন করা হলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জানান, "আমরা বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের সাথেই আমাদের সম্পর্ককে গভীরভাবে মূল্য দিই। তাদের একে অপরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারটি আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের উপরই ছেড়ে দিয়েছি।"

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর ভারত সরকার বাংলাদেশের হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবান জানায়।

তার প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয় যে, দিল্লির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের আহ্বানে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ভাংচুর করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলা হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার সোমবার একটি বিবৃতিতে বলেছে, "নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সারা দেশে অন্যান্য উপ বা সহকারী হাইকমিশনগুলোর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।"

বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত থেকে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসে স্বাভাবিকের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ও এর আশপাশে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা সংক্রান্ত ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত ছিল বলে দাবী করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেওয়া হয়েছে।)