সিরিয়ায় সংঘাত থামাতে সরকার  ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতার ডাক তুরস্কের 

আলেপ্পোর কাছে আল-নেয়রাব বিমান ঘাঁটিতে সিরিয়া বিমান বাহিনীর ফেলা রাখা জঙ্গি বিমানের পাশ দিয়ে দু'জন বিদ্রোহী মোটর সাইকেল চড়ে যাচ্ছেন। ফটোঃ ২ ডিসেম্বর, ২০২৪।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার (২ ডিসেম্বর) বলেছেন, সিরিয়ার বিরোধীপক্ষের যোদ্ধাদের সাম্প্রতিক দ্রুত অভিযান এটাই প্রমাণ করে যে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অবশ্যই তার নিজের জনগণের সাথে সমঝোতা করতে হবে এবং বিরোধীদের সাথে সংলাপে বসতে হবে।

আঙ্কারায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাকান ফিদান বলেন, তুরস্ক ও ইরান, যারা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে পরস্পরের বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দেয়, তারা শান্তি ফিরিয়ে আনতে রাশিয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

ফিদান, যার দেশ আসাদ-বিরোধী বাহিনীকে সমর্থন দেয়, সাম্প্রতিক সংঘাতের জন্য তুরস্ক-সমর্থিত বিরোধীদের সাথে সংলাপে বসতে সিরিয়ার সরকারের অস্বীকৃতিকে দায়ী করেন।

“সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আবারও দেখিয়েছে যে, দামেস্ককে অবশ্যই তার নিজের জনগণ ও বৈধ বিরোধীদের সাথে সমঝোতা করতে হবে," তুর্কি মন্ত্রী বলেন। "এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের অবদান রাখতে তুরস্ক প্রস্তুত রয়েছে।”

সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার আরেকটি জানালা খুলে যাবার সম্ভাবনার সৃষ্টি হল, যখন ইসরায়েল গাজায় হামাস এবং লেবাননেন হিজবুল্লাহ’র সাথে লড়াই করছে। এর ফলে রাশিয়া এবং তুরস্ক একে ওপরের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ সিরিয়াতে তাদের দুজনের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।

বিদ্রোহীরা বুধবার তাদের অভিযান ঘোষণা করে, ঠিক যখন ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ’র মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য আশা সৃষ্টি হয়।

এই অভিযান প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য ভীষণ বিব্রতকর, এবং এটা এসেছে এমন সময় যখন তাঁর মিত্র দেশগুলো – ইরান এবং তার সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো আর রাশিয়া – তাদের নিজস্ব সংঘাত নিয়ে ব্যস্ত।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান (ডানে) এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। ফটোঃ ২ ডিসেম্বর, ২০২৪।

আসাদের সাথে সমঝোতার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে তুরস্কের হতাশার মধ্যেই ফিদানের এই মন্তব্য উঠে এসেছে। তার মন্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সিরিয়ার নেতাকে রাজনৈতিক আলোচনায় বসার জন্য চাপ দেয়াই বিরোধী যোদ্ধাদের এইআকস্মিক অভিযানের লক্ষ্য হতে পারে।

তুরস্ক সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে কুর্দি জঙ্গিদের সাথে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা এবং ৩০ লাখের বেশি সিরিয় শরণার্থীর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দেশটির সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

আসাদ জোর দিয়ে বলেন, উত্তর সিরিয়া থেকে তুরস্কের সেনা প্রত্যাহার দুই দেশের মধ্যে যেকোনো স্বাভাবিকীকরণের শর্ত হতে পারে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আঙ্কারা সফরের আগে রবিবার আসাদের সাথে সাক্ষাৎ করে সিরিয়া সরকারের প্রতি তেহরানের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। ইরান আসাদের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থক এবং ২০১১ সালে আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হওয়ার পর থেকে সেখানে সামরিক উপদেষ্টা ও বাহিনী মোতায়েন করেছে।

ফিদান এবং আরাগচি দুজনেই বলেন, তুরস্ক, ইরান এবং রাশিয়া সিরিয়ার সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য নতুন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করবে।

“আমরা আরও ঘনিষ্ঠ আলোচনা এবং সংলাপ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবং আমাদের অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষে পরিস্থিতি আরও উন্নত করার জন্য আমরা সহযোগিতা করবো,” আরাগচি বলেন।

আলেপ্পোর কুর্দি-অধ্যুষিত এলাকা ইসলামি জিহাদি গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম-এর দখলে যাবার পর বাস্তচ্যুত কুর্দি জনগণ নিরাপত্তার জন্য শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন। ফটোঃ ২ ডিসেম্বর, ২০২৪।

রাশিয়া বলেছে তারা প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে সিরিয়ার গৃহ যুদ্ধের মোড় আসাদের পক্ষে ঘুরে যায়।

“আমাদের উপযুক্ত পর্যায়ে যোগাযোগ বজায় রাখছি এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছি,” ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার সংবাদিকাদের বলেন। “পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য কী প্রয়োজন তা নির্ধারণ করার জন্য একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

রাশিয়ান এবং সিরিয়ান জঙ্গি বিমান বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা অব্যাহত রেখেছে। হোয়াইট হেলমেট নামক সংগঠন যারা বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করে, জানায় যে, বিমান হামলায় ইদলিব শহরে চারটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আলেপ্পো শহরের উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহীরা তেল রিফাত শহর যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি কর্তৃপক্ষ থেকে দখল করার পর অনেক কুর্দি বাসিন্দা পালাতে শুরু করে। কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ এলাকা থেকে পিছু হটেছে।

বেসামরিক লোকজন যাতে নিরাপদে আলেপ্পো হয়ে উত্তর-পূর্বে কুর্দি এলাকায় চলে যেতে পারে তার জন্য এসডিএফ মানবিক করিডোর স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে।