অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ, ভয়েস অফ আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
এ জরিপটির ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
পড়ুন
ভিওএ বাংলা জরিপঃ আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেয়ার পক্ষে ৫৭% মানুষজরিপের ফলাফল নিয়ে অংশীজনদের মন্তব্য ও বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
ভয়েস অফ আমেরিকা: বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে আর ৩৫.৫ শতাংশ চান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক। সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা'র এক জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষে অধিকাংশ মানুষ মত দিয়েছেন, এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে নেতৃত্ব দিয়েছে। এদেশের প্রতিটি অর্জন ও গৌরবগাঁথায় আওয়ামী লীগের অবদান ছিল।
এই দলকে যারা নিষিদ্ধ করতে চায় বা অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার যতই চেষ্টা করা হোক না কেন আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা এতো সহজ নয়। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে যে অসাধারণ ভূমিকা পালন তা এ দেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
জোর করে, গায়ের জোরে বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের 'ফ্যাসিস্ট' কায়দায় অপ্রচার চালানো হচ্ছে ও মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লক্ষাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে আড়াইশ-এর উপরে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং এই মামলা প্রতিদিনই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা, ১৪ দলের নেতা এমনকি গণমাধ্যমের সাংবাদিক-লেখক তাদের বিরুদ্ধেও খুনের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আতঙ্ক তৈরী করা হচ্ছে। ফলে এতো বাধা বিপত্তির পরেও মানুষ মানুষ চায় আওয়ামী লীগ তার গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার রাজনীতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করুক। কারণ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক রাজনীতি, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি কখনোই সম্ভব নয়। এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে।
দেশ এমন একটা অরাজকতার মধ্য দিয়ে চলছে, যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুরও গ্যারান্টি নেই, কোনও বিচার নেই, মানবাধিকার নেই। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, গণমাধ্যমেরও মত প্রকাশের অবস্থা বিরাজমান নেই। মানুষের জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ও খেটে খেয়ে খাওয়া মানুষের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তারা শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভালো ছিল। এখনো মানুষের বিশ্বাসের ঠিকানা হিসাবে আওয়ামী লীগ বিবেচিত হয়।
ভয়েস অফ আমেরিকা: আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার পক্ষে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৬.৮ শতাংশ। এদের মধ্যে ৫৪. ৫ শতাংশ চান আওয়ামী লীগের এই নেতাদের আজীবনের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হোক। দল হিসেবে অধিকাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষে হলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা দেখতে চায় ৪৬.৮ শতাংশ মানুষ যাদের অর্ধেকের বেশি আওয়ামী লীগ নেতাদের আজীবন নিষিদ্ধের পক্ষে। এ বিষয়টি নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাই।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসাবে এতো বাধা-বিপত্তি নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কঠিন অবস্থা আমরা পার করছি। খুবই অস্বাভাবিক অবস্থা। এই অবস্থার মধ্যেও ৫৭ শতাংশ মানুষ চায় আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে টিকে থাকুক, রাজনীতি করুক, দেশের মানুষের কল্যানে কাজ করুক, দেশ পরিচালনায় কাজ করুক। এটা মানুষ ভয়েস অফ আমেরিকার জরিপেই এটা বেরিয়ে এসেছে। এতো চাপ, বাধা-বিপত্তি, যেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা কারাগারে, অধিকাংশ নেতারা আত্মগোপনে, এই অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষের আওয়ামী লীগের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, এটাকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে নেই। দেশের মানুষকে আমি সালাম ও শুভেচ্ছা জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
এর পাশাপাশি যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন, তাদের মধ্যেকার একটা অংশ চান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অনেকেই যেন না থাকে। অনেকেই যেন রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান বা এদের রাজনীতি থেকে বিদায় বা নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মতামত দিয়েছেন। আমি বলবো- উপযুক্ত সময় আসলে, পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করবো। নিশ্চয় সেখানে একটা মতামত বেরিয়ে আসবে। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা উপযুক্ত সময়েই সেই মত আমরা প্রকাশ করবো।
জরিপের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। কিন্তু এর উপর ভিত্তি করে তো কাউকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়া যায় না। বা কেউ যদি সমর্থন করেন তাকে তো বন্ধ করা যাবে না। তারা নেতৃত্বে থাকতে পারবে কি, পারবে না সেটার সিদ্ধান্ত নেবেন দলের নেতাকর্মী-সমর্থক ও দেশের জনগন। তারা না চাইলে তো কেউই থাকতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, এ দেশের রাজনীতিতে দলের অভ্যন্তরে সবচেয়ে গণতন্ত্র চর্চা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা দেশের মানুষকে সাক্ষী রেখে, তাদের শ্রদ্ধা ও সমর্থন নিয়েই আমরা রাজনীতি করি। ফলে যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে, প্রশ্ন আছে, সেগুলো আলোচনা করে দল ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন করবেন এবং দলও নিশ্চয় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটা দেশবাসীকে জানানো হবে।
(এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসিবুল হাসান।)