লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি শুরু

হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতী কার্যকর হওয়ার পর দক্ষিণ লেবাননের মারাইউন অঞ্চলে দুজন লেবানিজ সৈন্য চেকপোস্ট পাহারা দিচ্ছে। ফটোঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪।

লেবাননের সেনাবাহিনী বুধবার জানায়, তারা হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতীর প্রথম ঘণ্টাগুলো তদারকিতে সহায়তা করার জন্য দক্ষিণ লেবাননে আরও সৈন্য পাঠাচ্ছে।

প্রায় ১৪ মাস লড়াই-এর পর অস্ত্রবিরতি মোটামুটি কার্যকর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ লেবাননের দুটো গ্রাম, খিয়াম এবং কেফার কিলা গোলাবর্ষণ করেছে। দুই গ্রামের “নিষিদ্ধ এলাকায়” একটি গাড়ি দেখতে পাওায় তাদের সৈন্যরা গোলা বর্ষণ করে।

বুধবার ভোরে ইসরায়েল এবং লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যার ফলে সেখানে যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি নেতারা বলছেন, এটি গাজা ভূখণ্ডে আরেকটি যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে পারে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ লেবাননের দিকে ছিল গাড়ির স্রোত। সেখানে কয়েক মাস ধরে চলা তীব্র লড়াই এবং ইসরায়েলের সরে যাওয়ার আদেশ লোকজনকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছিল।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী লোকজনকে যেসব গ্রাম থেকে ইতোপূর্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সেসব গ্রাম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স এই সমঝোতার মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।

ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর সমর্থকরা প্রাক্তন নেতা হাসান নাসরাল্লাহর ছবি হাতে উল্লাস করছে। ফটোঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতিকে মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার অবসান ঘটাতে "গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরান ও তার প্রক্সি লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজায় হামাস জঙ্গিদের "চরম মূল্য দিতে হয়েছে।"

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী নেতার চার বছরের মেয়াদের দুই মাসের কম সময় বাকি আছে। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের ওপর তাদের আক্রমণ বন্ধ করতে সম্মত হওয়ায় “হামাসের একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদের একমাত্র উপায় হচ্ছে আমেরিকান নাগরিকসহ [গাজায় জিম্মিদের] মুক্তি দেয়া।”

বাইডেন বলেন, “সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক, মিশর, কাতার, ইসরায়েল ও অন্যদের গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য আবারও চাপ দেবে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কারণ এর ফলে ইসরায়েল ইরানের ব্যাপক হুমকির দিকে মনোযোগ দিতে পারবে, তাদের বাহিনীকে সতেজ করতে পারবে এবং গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে হামাসকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে।

নেতানিয়াহু অঙ্গিকার করেন যে, হিজবুল্লাহ যদি ইসরায়েলের ওপর আবার হামলা করে বা পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করে তাহলে ইসরায়েল অবিলম্বে লেবাননের জঙ্গি স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ শুরু করবে।

নেতানিয়াহু বলেন, “লেবাননে কী ঘটে তার ওপর যুদ্ধবিরতির মেয়াদ নির্ভর করবে।”

হিজবুল্লাহর সাথে প্রায় ১৪ মাস ধরে চলা লড়াইয়ে নেতানিয়াহু লেবাননে জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলার একদিন পর নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপ নিলেন।