লেবাননে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মতি দেবে কী না, সে বিষয়টি নিয়ে যখন ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দ ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই লেবাননের রাজধানী বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ও শহরটির দক্ষিণের শহরতলীতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালাচ্ছিল। এই হামলার পর আক্রান্ত এলাকায় ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ইসরায়েল এই প্রস্তাব মেনে নিলে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর ধরে চলমান সংঘাতে বিরতি আসবে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৈরুতের শহরতলীতে আরও ২০টি ভবনে হামলা চালানোর আগে বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সতর্কবাণী জারি করে। এই সতর্কবাণী এটাই ইঙ্গিত করছে যে যুদ্ধবিরতি চালু হওয়ার আগের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক হামলা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। ইসরায়েলি স্থলবাহিনী একইসঙ্গে এই সংঘাত চলাকালীন সময়ে প্রথমবারের মতো লেবাননের লিটানি নদীর কাছাকাছি কয়েকটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে। উল্লেখ্য, চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এ এলাকাটি।
যুদ্ধবিরতি চালুর বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে আশা করা যাচ্ছে, মঙ্গলবার বিকালে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ক্যাবিনেট যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এই প্রস্তাবে অনুমোদন দেবে। যদি সকল পক্ষ অনুমোদন দেয়, তাহলে এটা হবে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ অবসানে বড় পদক্ষেপ। এই যুদ্ধ পুরো অঞ্চলের অস্থিরতা বাড়িয়েছে এবং ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর পৃষ্ঠপোষক ইরানের মধ্যে বড় আকারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এই চুক্তিতে শুরুতে দুই মাস যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। চুক্তির শর্তমতে, হিজবুল্লাহকে দক্ষিণ লেবাননের একটি বড় এলাকা থেকে তাদের সশস্ত্র উপস্থিতি সরিয়ে ফেলতে হবে। অপরদিকে, ইসরায়েলি সেনারা তাদের নিজ সীমান্তে ফিরে যাবে। দক্ষিণে লেবাননের সরকারী সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখবে এবং নিশ্চিত করবে সব পক্ষ চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলছে।
তবে এখনো এই চুক্তি বাস্তবায়ন বড় আকারে প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরায়েল দাবি করেছে, হিজবুল্লাহ কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। লেবাননের কর্মকর্তারা এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবে লিপিবদ্ধ করতে অস্বীকার করেছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ মঙ্গলবার দাবি করেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউনিফিল নামে পরিচিত) এই চুক্তি বাস্তবায়নে “কার্যকর উদ্যোগ” না নিলে সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা চালাবে।
ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, লেবানন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করলেও ইসরায়েল লেবাননে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের দাবি, তারা হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে চায়।
আগে নেওয়া যুদ্ধবিরতির উদ্যোগগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলছেন, এখনো দরকষাকষি শেষ হয়নি। তারা উল্লেখ করেন, শেষ মুহূর্তে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে এই চুক্তি বিলম্বিত হতে বা ভেস্তে যেতে পারে।