ভয়েস অফ আমেরিকার জরিপে সংস্কারের পরে নির্বাচনের কথা এসেছেঃ এম সাখাওয়াত হোসেন

বিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ, ভয়েস অফ আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।

এ জরিপটির ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

পড়ুন

ভিওএ বাংলা জরিপঃ এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ, সব সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে ৬৫.৯%

জরিপের ফলাফল নিয়ে অংশীজনদের মন্তব্য ও বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়


প্রশ্নঃ ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার একটি জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ১ বছরের মধ্যে নির্বাচন চান আবার ওই একই জরিপের অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তারা চান, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা দরকার বলে মনে করবে সেই সবগুলো সংস্কার শেষেই নির্বাচন হোক। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

এম সাখাওয়াত হোসেন: প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন- সংস্কার হচ্ছে, হবে। তারপর একটা টাইমলাইন দেওয়া হবে, (কবে) নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনও গঠন হয়ে গেছে। তার মানে হচ্ছে আমাদের সরকারের চিন্তার মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টা আছে। না হলে এতো আগে কেন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। আমরা তো এখানে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে আসি নাই। দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার থাকতে হবে। সেই রাজনৈতিক সরকারের হাতে কিছু সংস্কার করে দিয়ে যাওয়া, যা রাজনৈতিক দল করতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে- দলগুলো কিছু সংস্কার আছে যা রাজনৈতিক দলগুলো করতে চাইলেও পারে না। কারণ তাদের নানা রকম সীমাবদ্ধতা থাকে। যা অরাজনৈতিকরা করতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে এসব সংস্কার করা খুবই দুরূহ।

সেই সংস্কারগুলো না করলে এখানে আমাদের বসে থাকার তো অর্থ নেই। সেই কারণে আমি যেটা মনে করি ভয়েস অফ আমেরিকার যে জরিপে সংস্কারের পরে সময় নিয়ে নির্বাচনের কথা এসেছে।

এর আগে (২০০৭-২০০৮ সালে) এক-দুই বছর চলে গিয়েছিল যে, অনেকগুলো সংস্কার করার কথা ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনে সংস্কার করে ফেলেছিলাম। কিন্তু পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার করা যায়নি। ছাত্র-জনতার যে রক্ত, এখনও সেই রক্তের দাগ রয়ে গেছে রাস্তায়। তারা এই রক্ত কেন দিল? কী কারণ ছিল, কী ব্যর্থতা ছিল? কারণ তারা অনুধাবন করেছিল দেশে রাজনৈতিকভাবে যা হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয় নাই। সেই সংস্কারগুলো না করলে এখানে আমাদের বসে থাকার তো অর্থ নেই। সেই কারণে আমি যেটা মনে করি ভয়েস অফ আমেরিকার যে জরিপে সংস্কারের পরে সময় নিয়ে নির্বাচনের কথা এসেছে।

এরমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ঠিকঠাক হোক, গত ১৫ বছরে এসব রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করতে পারে নাই। তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা কি আছে? থাকলে তো তারাই তো এই আন্দোলন তুঙ্গে নিয়ে যেতে পারতো। সেটা তো তারা করতে পারে নাই, ছাত্ররা করলো। তারা পরে যোগ দিয়েছে সেটা অন্য কথা। শুরুতে তো করেছে ছাত্ররা রক্ত দিয়ে।

কাজে আমি তাই মনে করি, সংস্কার করার পরে সেইগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। তারপর একটা রোডম্যাপ দেওয়া হবে নির্বাচন কবে হবে। সেটা দেড় কিংবা দুই বছরের মাথায় হতে পারে। এটা আমার মতামত।

আমার ব্যক্তিগত মতামত, সংস্কার সম্পূর্ণ করে, তারা বাস্তবায়ন দেখে তারপর নির্বাচনের পথে যাওয়া উচিত। না হলে অর্ধেক পথে গিয়ে সেই অবস্থায় হবে, যেটা আমরা ২০০৭-২০০৮ (এক-এগারো সরকার) দেখেছিলাম। তখন দুই বছরে অনেক কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু অনেক কিছু টিকে নাই।

প্রশ্নঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন অন্তর্বর্তী সরকার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে দেশ চালাচ্ছে, যদিও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ বা একই রকম করছে। এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া?

এম সাখাওয়াত হোসেনঃ এটা তো তাদের মতামত। আমি তো বলতে পারবে না যে দেশ খুব ভালো পরিচালনা করছি। আমরা কেমন দেশ পরিচালনা করছি, এটা জনগণ বলতে পারবে। সুতরাং এটার ওপর আমরা মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

(এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রিমন।)