পাকিস্তানে লকডাউন উপেক্ষা করে ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক ইসলামাবাদ যাচ্ছে 

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তার হাজার হাজার সমর্থক লকডাউন উপেক্ষা করে রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পেশোয়ার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪।

পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে সোমবার তার হাজার হাজার সমর্থক লকডাউন, কাঁদানে গ্যাস ও ব্যাপক গ্রেফতারি উপেক্ষা করে রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়েছে।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো তিন দিনের সফরে পাকিস্তানে এলেও খানের দলের নেতৃত্ব “লং মার্চ” চালিয়ে গেছে। রাজধানীর নিকটবর্তী এক বিমানবন্দরে লুকাশেঙ্কোকে সাদর অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংঘর্ষে অন্তত একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। মিছিলকারীরা ইসলামাবাদে পৌঁছতে বদ্ধপরিকর ছিল বলে মনে হয়েছে। ইসলামাবাদে দুই দিন ধরে লকডাউন চলছে এবং সেখানকার দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়েছে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন খান। তার বিরুদ্ধে দেড়শোর বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তারপরেও তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই বলেছে, মামলাগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিক্ষোভকারীদের নিয়ে গাড়ির বহর সোমবার বিকালে রাজধানীতে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ৯ থেকে ১১ হাজারের মধ্যে থাকবে বলে তাদের ধারণা, তবে পিটিআই বলছে, সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার (১৫ মাইল) দূরে মিছিলকারীদের আটকে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, খানের সমর্থকরা গ্যাসরোধী মাস্ক ও চোখ বাঁচাতে কালো চশমা পরেছিল।

ইসলামাবাদ ও অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পাঞ্জাব প্রদেশে প্রধান মহাসড়ক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বরাবর এলাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়িগুলিকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। এই এলাকায় রাস্তা অবরোধ করতে মালপত্রের বিশাল কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এই কন্টেইনারগুলি সরাতে কিছু বিক্ষোভকারী ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে।

পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতা কামরান বাঙ্গাশ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, “আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আমরা ইসলামাবাদে পৌঁছবই। যদিও আমাদের মিছিল থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে। আমরা একে একে সমস্ত বাধা পেরিয়ে যাব এবং আমাদের সমর্থকরা রাস্তা থেকে শিপিং কন্টেইনারগুলি সরিয়ে দিচ্ছে।”

বাঙ্গাশ আরও বলেছেন, খানের স্ত্রী বুশরা বিবি (যাকে এক দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে) খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুরের সঙ্গে এই মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন। উল্লেখ্য, এই প্রদেশে খানের দল এখনও ক্ষমতায় রয়েছে।

ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দূরে মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরখায় ঢেকে একটি ট্রাকে বসে বুশরা বিবি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন এবং নিজেদের লক্ষ্য অর্জন ও খানকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর থাকতে সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তারপর, “আল্লাহ মহান” স্লোগান দিয়ে তিনি সেই স্থান ত্যাগ করেন।

খানের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী শরিফ বর্তমানে সরকারের প্রধান। তার মুখপাত্র আতাউল্লাহ তারার রবিবার বলেছেন, উচ্চ পর্যায়ের বিদেশী প্রতিনিধি যখনই পাকিস্তানে আসেন, পিটিআই “লং মার্চের রাজনীতি করে এবং অর্থনীতিকে ক্ষতি করতে ইসলামাবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে।”

কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলছেন, এই বিক্ষোভ সে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিতে কোটি কোটি রুপির ক্ষতি করতে পারে।

চলমান বিক্ষোভকে বানচাল করে দিতে পুলিশ শুক্রবার থেকে ৪ হাজারের বেশি খান-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে এবং “নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এমন এলাকাগুলিতে” মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্ক পিটিআই বলেছে, ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে বিক্ষোভের আহ্বান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোমবার নকভি নিশ্চিত করেছেন যে, খানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন।