বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েলের বিমান হামলা, বলছে নিরাপত্তা সূত্র

লেবাননের, বৈরুতে কেন্দ্রেস্থলে ইসরায়েলি বিমান হামলার স্থানে উদ্ধারকর্মী এবং অন্যান্যরা জড়ো হয়েছেন, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪।

নিরাপত্তা সূত্র জানায়, শনিবার বৈরুতের কেন্দ্রস্থলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল একটি শক্তিশালী বিমান হামলা চালিয়েছে । ইরান-সমর্থিত হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলায় লেবাননের রাজধানী কেঁপে উঠে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে হেজবুল্লাহর আল-মানার সম্প্রচার মাধ্যম জানায়, বৈরুতের বাস্তা এলাকায় হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত ও ৬৩ জন আহত হয়েছে।

লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা শনিবার সকালে জানায়, হামলার ফলে বহু প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটেছে এবং একটি আটতলা ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। লেবাননের আল জাদীদ চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে অন্তত একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন এবং তার চারপাশে আরও কয়েকটি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত ভবন দেখা যায়।

সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েল হামলার সময় বাংকার বিধ্বংসী বোমা ব্যবহার করে ফলে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হামলার ঘণ্টা কয়েক পরেও বৈরুতে বিস্ফোরকের তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়।

রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৪টার দিকে বিস্ফোরণগুলোর শব্দে রাজধানী কেঁপে উঠে। নিরাপত্তা সূত্রগুলি জানিয়েছে, হামলায় অন্তত চারটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়।

বৈরুতের বাস্তা এলাকায় ইসরায়েলি আক্রমণের পর লোকজন বিধ্বস্ত ভবনের ভেতরে তাদের জিনিষপত্রের খোঁজ করছে। নভেম্বর ২৩,২০২৪।

এই সপ্তাহে বৈরুতের একটি কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে লক্ষ্য করে এই নিয়ে চতুর্থবার ইসরায়েলি বিমান হামলা করা হল। এই অঞ্চলে ইসরায়েলের বেশিরভাগ হামলা হেজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলের উপশহরগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। রবিবার বৈরুতের কেন্দ্রস্থলের রাস আল-নাবা জেলায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হেজবুল্লাহর এক গণমাধ্যম কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

ইসরায়েল বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের উপশহরে বিমান হামলায় তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মিত্র, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের শত্রু হেজবুল্লাহর কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে।

গাজা যুদ্ধের কারণে প্রায় এক বছর ধরে চলা সীমান্ত সংঘাতের পর, সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েল লেবাননে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। তারা লেবাননের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিমান হামলা চালিয়ে এবং দক্ষিণে সেনা পাঠিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করে।

সংঘাতটি শুরু হয় যখন হেজবুল্লাহ তাদের ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার পর তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে হামলা শুরু করে।

ইসরায়েলের উপর সেই হামলায়, হামাস জঙ্গিরা ১,২০০ জনকে হত্যা এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত করে। ইসরায়েল দাবি করে, তাদের বিশ্বাস হামাস এখনও ১০১ জনকে জিম্মি করে রেখেছে। এর মধ্যে ৩৫ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।

গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪৪,০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারা তাদের গণনায় যোদ্ধা এবং সাধারণ নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য করে না।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি গাজার হামাস এবং লেবাননের হেজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একজন মধ্যস্থতাকারী লেবানন এবং ইসরায়েলে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় সফর করেন। এই দূত, আমোস হোচস্টেইন মঙ্গলবার এবং বুধবার বৈরুতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর অগ্রগতি হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন। এরপর তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাটজের সঙ্গে বৈঠক করতে যান।