জাতিসংঘ কমিটি:গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ‘গণহত্যার শামিল’

গাজা সিটির একটি পাড়ায় ইসরায়েলি হামলার পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত জাতিসংঘের স্কুল থেকে ধোঁয়া বেরোনোর সময়ে লোকজন সেখানে জড়ো হন। গাজা ভূখন্ডের উত্তরাঞ্চল,নভেম্বর ১৪, ২০২৪।

গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ যখন অব্যাহত, জাতিসংঘের একটি বিশেষ কমিটি বলেছে গাজায় ইসরায়েলের নীতি ও আচরণ “গণহত্যার বৈশিষ্টের অনুরূপ”।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েলের আচরণ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ কমিটি “ক্ষুধার্ত রাখাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের” জন্যও এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে “বর্ণবৈষম্যবাদ ব্যবস্থা” প্রচলনের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে।

ইসরায়েলি সরকারের তরফ থেকে কোন তাত্ক্ষণিক জবাব পাওয়া যায়নি। অতীতে তারা জাতিসংঘকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করা অভিযোগ এনেছে।

ইসরায়েলের দখলদারিত্বের উপর নজরদারি করতে জাতিসংঘের এই বিশেষ কমিটিটি ১৯৬৮ সালে গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ঘটে যা্ওয়া বিষয়গুলি এই বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দাবি তদন্ত করে দেখছে যে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গণহত্যামুলক। ইসরায়েলি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার হিউমান রাইটস ওয়াচও ইসরায়েলকে গাজায় হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যে কী না বার বার অসামরিক লোকদের স্থানচ্যূত করিয়েছে এবং অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে তারা “ জোর পূর্বক অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধাপরাধ করছে” এবং তাদের এই কর্মকান্ড “জাতিগোষ্ঠীগত বিশুদ্ধিকরণের সংজ্ঞার সমতূল্য” কারণ এখানে ফিলিস্তিনিদের ফিরে আসতে দেয়া হবে না।

এর জবাবে ইসরায়েল এই সংগঠনকে দোষারোপ করে বলেন এই বাগাড়ম্বর “সম্পুর্ণ মিথ্যা ও বাস্তব বিবর্জিত”।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে যে ইসরায়েলের প্রচেষ্টাগুলি “কেবলমাত্র হামাসের সন্ত্রাসী সক্ষমতাকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিহিত, গাজার জনগণের বিরুদ্ধে নয়, হামাসের মত নয় যারা অসামরিক লোকজনকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং আবাসিক এলাকাগুলিতে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর প্রবেশ ঘটায়”।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন এক বিবৃতিতে বলেন,“ইসরায়েল সব অসামরিক ক্ষতিকে শোকের বিষয় বলে মনে করে অথচ হামাস সব অসামরিক ক্ষতিকে কৌশল হিসেবে দেখে। ইসরায়েল সশস্ত্র সংঘাতের নিয়ম অনুয়ায়ী অভিযান চালিয়ে যাবে”।

হামাস অস্বীকার করেছে যে তারা অসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কিংবা যোদ্ধা ও অস্ত্রশস্ত্র হাসপাতাল কিংবা স্কুলের মতো স্থাপনায় লুকিয়ে রাখে।

যুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি

হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গত বছর সন্ত্রাসী আক্রমণে নেতৃত্ব দেয়ার পর গত বছর ইসরায়েল গাজা ভূখন্ডে প্রবেশ করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে হামাসের ওই সন্ত্রাসী আক্রমণে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে তারা জিম্মিকেরে নিয়ে যায়, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন এখনও গাজায় আছেন এবং মনে করা হয় তাদের এক-তৃতীয়াংশই মারা গেছেন।

তার পর থেকে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে ৪৩,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া ১,০৩,০০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে নিহতদের মধ্যে হাজার হাজার হামাস জঙ্গিও রয়েছে। ইসরায়েল ওই ছিঁটমহলের বেশির ভাগ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে যার ফলে ২৩ লক্ষ লোকের অধিকাংশরাই বার বার বাধ্যতামূলক ভাবে স্থানচ্যূত হয়েছেন।

মধ্য সেপ্টেম্বরে এই যুদ্ধ লেবাননে ছড়িয়ে পড়ে । এর আগে বেশ কিছু মাস ধরে হেজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে ড্রোন ও বিমান হামলা চালায়। ৩,২০০’র ও বেশি লেবাননবাসী নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন গত ছয় মাসে।

হামাস ও হেজবুল্লাহ উভয়কেই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে।