শ্রীলঙ্কার মার্ক্স-ঘেঁষা নতুন প্রেসিডেন্ট আনুরা কুমার দেশানায়াকের দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে; শুক্রবারের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী ফলাফল থেকে এমনটাই জানা গেছে। অর্থনীতিকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলতে তার কর্মসূচি রূপায়নের পক্ষে দৃঢ় ম্যান্ডেট পেলেন আনুরা।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত আংশিক ফলাফল অনুযায়ী, সংসদের ২২৫টি আসনের মধ্যে দেশানায়াকের ন্যাশনাল পিপল’স পাওয়ার পার্টি অন্তত ১২৩টি আসনে জয় লাভ করেছে।
বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমদাসার নেতৃত্বাধীন সামাজি জন বলভেগায়া বা ইউনাইটেড পিপল’স পাওয়ার পার্টি ৩১টি আসন লাভ করেছে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এই দ্বীপরাষ্ট্রকে শাসন করে আসছিল চিরাচরিত রাজনৈতিক দলগুলি; শ্রীলঙ্কার জনগণ এই দলগুলিকে প্রত্যাখ্যান করায় ২১ সেপ্টেম্বর দেশানায়াকা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে, তিনি মোট ভোটের মাত্র ৪২ শতাংশ অর্জন করেছেন। এর ফলে বৃহস্পতিবারের সংসদীয় নির্বাচনে তার দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ছিল। তবে, প্রেসিডেন্ট পদে দুই মাসেরও কম সময় থাকার পরেও তার দলের প্রতি সমর্থন ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সে দেশের নির্বাচনী পটভূমিতে প্রধান চমক ও বড় রদবদল দেখা গেছে কেননা তার দল জাফনা জেলায় বিজয় লাভ করেছে। শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলের এই জেলা তামিল জনজাতির প্রাণকেন্দ্র ও অন্যান্য অনেক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জোরালো ঘাঁটি।
জাফনায় বিজয় ঐতিহ্যবাহী জাতিগত তামিল দলগুলির জন্য একটা বড় ধাক্কা; এই দলগুলি স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিতে আধিপত্য করে এসেছে।
তামিলদের মনোভাবেও একটা বড় বদল লক্ষ্য করা গেছে। তামিলরা জাতিগত সংখ্যাগুরু সিংহলী নেতাদের প্রতি দীর্ঘকাল ধরে সন্দেহ পোষণ করে এসেছেন। পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তামিল বিদ্রোহীরা ১৯৮৩-২০০৯ সালে এক গৃহযুদ্ধে লড়াই করেছে, যদিও তা সফল হয়নি। তারা বলেছিল, সিংহলী-নিয়ন্ত্রিত সরকার তাদের প্রান্তিক করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, এই সংঘাতে ১ লক্ষের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
কলম্বো-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বীরাগাথি থানাবালাসিংহম বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের ভোটাররা এনপিপি-কে বেছেছেন কারণ তারা ঐতিহ্যবাহী তামিল দলগুলির স্থানীয় বিকল্প খুঁজে পাননি; এই দলগুলির প্রতি তাদের মোহভঙ্গ হয়েছিল।