আফগানিস্তানে হত্যার দায়ে সাজাপ্রাপ্তকে প্রকাশ্যে প্রাণদন্ড কার্যকর করলো তালিবান

আফগানরা পাখতিয়া প্রদেশের গার্দেজে ফুটবল স্টেডিয়ামে একজন লোকের প্রাণদন্ডের প্রকাশ্য দৃশ্য দেখার পর চলে যাচ্ছে। নভেম্বর ১৩,২০২৪।

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে তালিবান কর্তৃপক্ষ ইসলামে শাস্তিমূলক বিচার বা কিসাস’এর বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযুক্ত এক হত্যকারীর প্রাণদন্ড প্রকাশ্যে কার্যকর করেছে ।

তালিবান সুপ্রিম কোর্ট সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্স’এর মাধ্যমে ঘোষণা করে যে ভোর বেলাকার এই শাস্তি পাখতিয়া প্রদেশের রাজধানী গার্দেজের খেলার স্টেডিয়ামে কার্যকর করা হয়। ঘটনাটিতে জাতিসংঘ দ্রুত নিন্দা জানিয়েছে।

প্রাদেশিক সরকার বলেছে অন্যান্যদের মধ্যে তালিবানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানিসহ জনসাধারণ, বয়স্ক অসামরিক লোকজন, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা এবং সামরিক কর্মকর্তারা এই প্রাণদন্ড প্রদানটি দেখেন। কর্তৃপক্ষ আগত লোকজনদের ক্যামেরা কিংবা মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে দেননি।

মোহাম্মদ আয়াজ আসাদ বলে সনাক্ত এই দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে যে সে তালিবান নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে।

এই প্রাণদন্ড কার্যকর করার ব্যাপারে তালিবানের শীর্ষ আদালত নির্দিষ্টভাবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি , তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন যে বন্দুকের গুলি ব্যবহার করা হয়। সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায় জনসাধারণ ঘটনাটি দেখার স্পোর্টস স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছে।

যদিও তালিবান সরকার কোন দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি , তারা তালিবান সরকারের নামে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছে , “ এই মামলাটি নিবিড় ভাবে তিন পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ইসলামিক আমিরাতের সামরিক আদালত দ্বারা এবং তারপর এই প্রতিশোধমূলক বিচার বা কিসাসের আদেশ জারি করা হয়। ২০২১ সালের আগস্টে তালিবান আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আফগানিস্তানে এটি ছিল হত্যায় অভিযুক্ত ষষ্ঠ ব্যক্তির প্রাণদন্ড। তারা এখন অপরাধমূলক বিচারের ব্যবস্থাটি করছে ইসলামিক আইন শারিয়ার মাধ্যমে। আগে বন্দুকের গুলির মাধ্যমে প্রাণদন্ড দেয়া হতো।

জাতিসংঘ এ ধরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে “ এটি জীবনের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি এবং “ নৃশংস, অমানবিক এবং অবমাননামূলক আচরণ বা শাস্তি”। তবে এ সত্ত্বেও কার্যত আফগান নেতারা এই রকমের প্রাণদন্ড দিয়ে আসছেন।

আফগান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপটিয়ার রিচার্ড সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স এ বুধবার বলেন, “ আফগানিস্তানের গার্দেজ স্পোর্টস স্টেডিয়ামে আজকের ভয়াবহ প্রকাশ্য হত্যা এবং তালিবানের অন্যান্য শাস্তি ও হত্যাকান্ডের আমি ত্ীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

বেনেট বলেন, “ আমি এই ধরণের ঘৃণ্য শাস্তি, যা মানবাধিকারের স্পষ্ট লংঘন অবিলম্বে বন্ধ করতে তালিবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

পৃথক ভাবে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহযোগিতা মিশন এই প্রাণদন্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে দেয়া মন্তব্যে বলে যে এই ধরণের “ কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের দায়িত্বের বিপরীত এবং তা বন্ধ করতে হবে”।

আফগানিস্তানের জনাকীর্ণ স্টেডিয়ামগুলিতে যৌনতা, সমকামিতা , চুরি ও ডাকাতির মতো “অনৈতিক অপরাধের” জন্য শত শত নারীকে তালিবান প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করেছে। তালিবান সুপ্রিম কোর্টের উপাত্ত অনুযায়ী কেবল মাত্র অক্টোবর মাসেই , নারীসহ প্রায় ১০০ জন আফগানকে দর্শকদের সামনে বেত্রাঘাত করা হয় এবং তারা ছয় মাস থেকে দু বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য কারা দন্ডে দন্ডিত হয়েছে।

জাতিসংঘের মূল্যায়ন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের সময়ে নারীদের অধিকার ভীষণ ভাবে খর্ব করা হয়।

তালিবান তাদের ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করে এবং নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে সব বিধিনিষেধ সে সব পরিহার করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।