গত সপ্তাহের ২০২৪ জাতীয় নির্বাচনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় ছিল ব্যাপক এবং প্রশ্নাতীত। এই জোরালো জয়ের মাধ্যমে তিনি হোয়াইট হাউসে নতুন চার বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হলেন।
নভেম্বর মাসের ৫ তারিখের আগে জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরীপগুলোতে দেখা যায় যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস ট্রাম্প থেকে সামান্য এগিয়ে, হয়তো এক বা দুই শতাংশ।
জরীপগুলো ইঙ্গিত করে, যে সাতটি রাজ্যকে নির্বাচন বিশ্লেষকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড বা ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে গণ্য করছিলেন, সেগুলোতে ডেমোক্র্যাট দলের হ্যারিস এবং রিপাবলিকান দলের ট্রাম্প প্রায় সমান সমান অবস্থানে ছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্প এই সাতটি রাজ্যই দখল করে নেন, যার ফলে রাজ্য-ভিত্তিক ইলেক্টরাল কলেজ ভোটে হ্যারিসের ২২৬-এর বিপরীতে তিনি ৩১২টি পেয়ে ব্যাপক হারে জয়ী হন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে এই ইলেক্টরাল কলেজ, যেখানে মোট ৫৩৮ ভোট রয়েছে। জয়লাভের জন্য প্রার্থীর প্রয়োজন ২৭০।
সাতটি সুইং স্টেট-এ ট্রাম্পের জয়ের ব্যবধান ছিল উইসকনসিনে ১ শতাংশ থেকে অ্যারিজোনায় ৬ শতাংশের বেশি।
তিনি যখন ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন, তখন ৭৮-বছর বয়সী ট্রাম্প হবেন দেশের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যার দ্বিতীয় মেয়াদ প্রথম মেয়াদের পরেই আসেনি। এর আগে ১৮৯০-এর দশকে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর বিরতির পর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ডনাল্ড ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে শুধু ইলেক্টরাল কলেজ ভোট না, সারা দেশে জনগণের দেয়া মোট ভোটে – বা পপুলার ভোট – ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। কুড়ি বছরে – ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের পর – ট্রাম্পই প্রথম রিপাবলিকান প্রার্থী যিনি পপুলার ভোটে জয়ী হলেন।
শেষ ভোটগুলোর গণনা এখনো চলছে, কিন্তু ট্রাম্প ইতোমধ্যেই পরিষ্কারভাবেই জয়ী হয়েছেন। তিনি এ’পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কোটি পপুলার ভোট পেয়েছেন, আর হ্যারিস পেয়েছেন সাত কোটি ১ লক্ষের একটু কম।
অর্থাৎ, ট্রাম্প পপুলার ভোটের ৫০.৫ শতাংশ পেয়েছেন, আর তার বিপরীতে হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭.৯ শতাংশ।
ট্রাম্প ২০২০ সালে যখন জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন তখন তিনি সাত কোটি ৪০ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন, যা তাঁর ২০২৪ সালের ভোট সংখ্যার প্রায় সমান। কিন্তু হ্যারিস যা ভোট পেয়েছেন তা বাইডেনের থেকে প্রায় এক কোটি কম।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা জনমত জরীপ পরিচালনা করেন, তারা প্রায় বলতে পছন্দ করেন যে, তাদের জরীপ ক্ষণিকের চিত্র দেয় শুধু, এগুলো কোন ভবিষৎবাণী নয়।
কিন্তু ২০১৬ থেকে ট্রাম্প যে তিনটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, সেখানে জরীপে তাঁর সমর্থনের মাত্রা সবসময় কম করে দেখানো হয়েছে।
জরীপকারীরা অনেক চেষ্টা করেছে তাদের ফলাফলে ‘লুকিয়ে থাকা’ ট্রাম্প সমর্থনের ব্যাখ্যা দিতে, যেখানে অনেকে জরীপের সময় বা ভোট কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর বা ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর পরও তারা বলেননি যে ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছেন।
এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখা গেছে নারীরা হ্যারিসকে বেশি ভোট দিয়েছে আর পুরুষরা ট্রাম্পকে। শিক্ষিত ভোটাররা বেশি হ্যারিসের পক্ষে গেছেন আর যাদের ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি নেই তারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকানের কোন ডিগ্রি নেই।
তাঁর বিশাল ভোট সংগ্রহ করতে দিয়ে ট্রাম্প দুটি সম্প্রদায়ের ভেতরে সমর্থন বাড়িয়েছেন যারা ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাটিক – কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা ল্যাটিনো জনগোষ্ঠী।
ভোটারদের মাঝে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর ভোটকাস্ট জরীপ অনুযায়ী, কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ১৬ শতাংশ ২০২৪ সালে ট্রাম্পে সমর্থন করে, যেটা ছিল ২০২০ সালের দ্বিগুণ।
অন্যদিকে, ৮৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার কমালা হ্যারিসকে ভোট দেয়, যেটা ছিল ২০২০ সালে বাইডেনের পক্ষে ৯১ শতাংশ থেকে অনেক কম।
ডেমোক্র্যাটরা ল্যাটিনোদের মাঝে সমর্থন হারিয়েছে। হ্যারিস ২০২৪ সালে ৫৬ শতাংশ ল্যাটিনো ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে বাইডেন ২০২০ সালে পেয়েছিলেন ৬৩ শতাংশ।
ল্যাটিনোদের মাঝে ট্রাম্পের সমর্থন বৃদ্ধি পায়, ২০২০ সালের ৩৫ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালের ৪২ শতাংশে।