যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কামালা হ্যারিসের পরাজয় স্বীকার

ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজয় স্বীকার করে ভাষণ দেন। ৬ নভেম্বর ,২০২৪।

আমেরিকান ভোটদাতারা ব্যাপক ভাবে কামালা হ্যারিসকে প্রত্যাখ্যান করায় , তিনি বুধবার ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তাঁর পরাজয় স্বীকার করেন এবং দেশকে নিয়ে তাঁদের যে স্বপ্ন রয়েছে তার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখতে তাঁর সমর্থকদের উৎসাহিত করেন।

ডেমক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন এই লড়াই চলতে থাকবে “ নির্বাচনী বুথে, আদালতে এবং জনগণের চত্বরে”।

তিনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন এবং যেখানে তিনি আশা করেছিলেন তাঁর বিজয়ের ভাষণ দেবেন সেই হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন , “কখনও কখনও লড়াইয়ে সময় লাগে। তার অর্থ এ নয় যে আমরা জয়লাভ করবো না”।

হ্যারিসের এই পরিস্কার পরাজয় এমন আশাকে ধূলিস্মাৎ করে দিয়েছে যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূণর্নিবাচনের প্রচেষ্টা থেমে যাওয়ার পর তিনি যখন নিজেকে এই শীর্ষ পদের প্রার্থী করেন তখন মনে করা হয়েছিল যে তিনি ডেমক্র্যাটদের রক্ষা করবেন।

তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিটি রাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের তূলনায় পিছিয়ে ছিলেন। তিনি ট্রাম্পকে দেশের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বিরাজমান বিপদ বলে বর্ণনা করেন। তবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের পদের জন্য তাঁর তিনটি নির্বাচনী প্রচার অভিযানে এই প্রথম জনগণের প্রদত্ত প্রত্যক্ষ ভোটেও এগিয়ে ছিলেন – তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি অভিশংসন , গুরুতর অপরাধ এবং এর আগের নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের ফল পাল্টানোর প্রচেষ্টার জন্য তিনি অভিযুক্ত।

ট্রাম্প সম্পর্কে তাঁর কড়া সতর্কতা সত্ত্বেও, বুধবারের বক্তব্যে তিনি ছিলেন আশাবাদী। তিনি তাঁর সমর্তকদের বলেন, “ দুঃখ পাওয়া এবং হতাশ হওয়াতো হতেই পারে কিন্তু অনুগ্রহ করে জানবেন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে”। এই সময়ে তাঁর সমর্থকদের কেউ কেউ অশ্রু মুছছিলেন।

হ্যারিসের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী টিম ওয়ালজ তাঁর পরিবারসহ দর্শকদের মাঝে ছিলেন। তা ছাড়া হাউসের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলসি এবং বারবারা লী , যারা উভয়ই হ্যারিসের নিজের রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার বাশিন্দা।

তাঁর ভাষণের আগে ট্রাম্পের বিজয়ের জন্য তিনি ট্রাম্পকে ফোন করে অভিনন্দন জানান। তিনি সমবেত দর্শকদের বলেন, “ আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো”।

ভোটদাতারা আমেরিকান গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগকে নাকচ করে দিয়ে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসে ফেরত পাঠাচ্ছেন।

বাইডেন নির্বাচনের ফলাফল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবেন বলে কথা আছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে বুধবার তিনি হ্যারিস ও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন।

বাইডেন ট্রাম্পের সঙ্গে ২৭ জুনের বিতর্কে বার বার থমকে যাওয়ার পর তিনি ভোটদাতাদের এ কথা আর বোঝাতে পারেননি যে ৮৬ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্টের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন আর তখনই হ্যারিস ডেমক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হন।

২১ জুলাই বাইডেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্টকে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী করেন। হ্যারিস তখন তার প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে ডেমক্র্যাটিক পার্টিকে একত্রিত করেন।

এ ছিল হ্যারিসের নিয়তিতে বড় রকমের পরিবর্তন চলে আসে।

কোন কোন ডেমক্র্যাট যখন বাইডেনের পরে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে তখন তাঁকে নাকচ করে দেয়। কিন্তু হ্যারিস আবার নতুন কারণ খুঁজে পান যখন ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রো বণাম ওয়েড মামলার রায়টি বাতিল করে দেয়। তিনি তখন গর্ভপাতের পক্ষে হোয়াইট হাউজের প্রধান প্রবক্তা হয়ে ওঠেন।

হ্যারিস স্থানীয় রাজনীতিক , ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন। হ্যারিস তাৎক্ষণিক ভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যোগ দেন তাঁর প্রার্থিতা ডেমক্র্যাটদের উৎসাহিত করে , যারা মনে করেছিলেন বাইডেন প্রার্থী হলে তারা পরাজিত হবেন।

তবে তিনিও প্রথম থেকেই নানান অসুবিধার সম্মুখীন হন। তিনি বাইডেনের রাজনৈতিক তৎপরতার উত্তরাধিকার হয়ে যান। যদিও তিনি নিজের সঙ্গে বাইডেনের অর্থবহ পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় হ্যারিস টিকতে পারেন নাই