দুই বছর আগে কার্যত আফগানিস্তানের শাসক তালিবান কর্তৃপক্ষ আফিম চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তা সত্ত্বেও টানা দুই বছর ধরে দেশটিতে এই ফসলের চাষ বাড়ছে। জাতিসংঘ বুধবার জানিয়েছে, এ বছর প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে আফিম চাষ। তবে তা সত্ত্বেও, নিষেধাজ্ঞা জারির আগের সময়ের তুলনায় চাষের পরিমাণ এখন কম হচ্ছে।
২০২৩ সালে নাটকীয়ভাবে এই ফসলের চাষ ৯৫ শতাংশ কমে যাওয়ার পর আবারও নতুন করে বেড়ে গেল আফিমের চাষ। সে সময় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দক্ষিণ এশিয়ার এই দরিদ্র দেশে ফসলটির উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে হিরোইন মাদক উৎপাদনের এই কাঁচা মালের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। এই তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের মাদক ও মাদক-অপরাধ কার্যালয় বা ইউএনওডিসি।
প্রায় বিনা বাধায় আফগানিস্তানের শাসনভার দখলের কয়েক মাস পর ২০২২ সালের এপ্রিলে সব ধরনের মাদক উৎপাদনের ওপর দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালিবান শাসক। এতে আফিম পপির উৎপাদনে বড় আকারে ভাটা দেখা দেয়।
বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়েছে।
সমীক্ষায় হুশিয়ারি দেওয়া হয়, আফিমের উচ্চ মূল্য ও দেশীয় মজুদ কমতে থাকায় আফগান চাষিরা তালিবান আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করতে পারে এবং এতে নতুন করে প্রথাগত উৎপাদনকেন্দ্রের বাইরে এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশেও পপি চাষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জাতিসংঘ জোর দিয়ে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দরিদ্র দেশটির চাষিদের জরুরি ভিত্তিতে জীবিকা অর্জনের টেকসই অর্থনৈতিক সুযোগের প্রয়োজন, যাতে তারা সহনশীলতা বাড়াতে পারেন এবং তাদেরকে পপি চাষ থেকে নিরুৎসাহিত করা যায়।
আফগান যুদ্ধে প্রায় দুই দশক সম্পৃক্ত থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নেটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে ২০২১ এর আগস্টে দেশটির ক্ষমতা পুনর্দখল করে নেয় তালিবান। এরপর এখন পর্যন্ত কোনো দেশই তাদেরকে আফগানিস্তানের বৈধ শাসকের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
কার্যত আফগানিস্তানের মৌলবাদী নেতারা তাদের নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ইসলামিক শরিয়া আইনের কঠোরতম সংস্করণ চালু করেছেন। তারা ষষ্ঠ শ্রেণির পর নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করেছেন এবং বেশিরভাগ আফগান নারীর সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাকুরি করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন।
আফগান নারীদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালিবানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন খাতে অংশীদারিত্বে যেতে নিরুৎসাহিত হয়েছে। তবে দেশটিতে লাখ লাখ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।