বিশ্লেষকদের মতে সম্প্রতি ইরান যে ইসরায়েলের উপর সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে ইসরায়েলকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে, তা প্রধানত ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে ওই ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি তার মূল শত্রুর কাছ থেকে আরও ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।
বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবটুকুকে ভেঙ্গে দিয়েছে। ইসরায়েলের এই হামলা ছিল ১ অক্টোবর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের পাল্টা জবাব। ইরান বলছে তারা ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে এখনও ক্ষয়-ক্ষতির মূল্যায়ন করছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক নিউ লাইন্স ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি এন্ড পলিসির নিকলাস হেরাস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে এই বিমান হামলাগুলি এটাই প্রমাণ করে যে ইসরায়েলের “ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে গুণগত সামরিক সুবিধা রয়েছে” যা কীনা ওই মুসলিম রাষ্ট্রটির প্রতিহত করার কৌশলের উপর প্রভাব ফেলেছে।
হেরাস বলেন, “ তারা উন্নত এস-৩০০ বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা দিয়ে আঘাত হেনেছে , যার ফলে তারা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে যে সমস্ত স্থান আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বাহক নির্মাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই সঙ্গে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করে সেখানে আঘাত করেছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইরানের প্রতিরোধ কৌশলের মূল উপাদান”।
তিনি বলেন, “ তারা মূলত ইরানিদের এই বার্তাই দিতে চেয়েছিল যে প্রযুক্তিগত যুদ্ধের বিষয়ে ইরানিরা ইসরাইলিদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে”।
কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস ‘এর ফেলো নিকোল গ্রাজুয়েস্কি ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি সম্পর্কে অন লাইন দিওয়ানে লেখেন, “ সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে ইসরায়েলকে প্রতিহত করার ইরানের প্রচেষ্টা হিতে বিপরীত হয়েছে , তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যে ফাঁক রয়েছে, যেটিকে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান ভাবে লক্ষ্যবস্তু করতে চায়, সে দিকে নজর দেয়নি .. আর তাই ১ অক্টোবরের তূলনায় ইরান সম্ভবত এখন নিজেকে আরও আশংকাজনক স্থানে নিয়ে গেছে”।
দ্য ওয়ার জোন পত্রিকায় টমাস নিউডিক তার লেখায় সম্মত হন। তিনি বলেন, “ ইরানের এস ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রকে কর্মক্ষমতার বাইরে রাখায়, ইসরায়েলের জন্য ব্যাপক পরিমাপের প্রত্যক্ষ আক্রমণসহ ,পরবর্তী আক্রমণের পথ খুলে দিল”।
তিনি বলেন এটি, “ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আক্রমণের এবং ইরানের পাল্টা জবাব প্রতিহত করার সুযোগ নিয়ে এসেছে”।
নিউডিক বলেন, “ এটা প্রায় অবশ্যম্ভাবী যে ইরান যদি আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে এ ধরণের আক্রমণ চালায় তা হলে ইসরায়েলের কাছে বহু পাল্টা বিকল্প পরিকল্পনা করা আছে”।
ইরানের প্রতিহত ক রার আরেকটি কৌশল হচ্ছে বহু বছর ধরে সিরিয়া এবং আঞ্চলিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গেড় তোলা। এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে ইরাকের অভ্যন্তরের জঙ্গিগোষ্ঠী, গাজায় হামাস, ইয়েমেনর হুথি বিদ্রোহী এবং লেবাননের হেজবুল্লাহ। ইসরায়েল হামাস ও হেজবুল্লাহর নেতাদের হত্যা করেছে যাদের মধ্যে প্রধান হচ্ছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও হাসান নাসরাল্লাহ।
ওয়াশিংটন কুইন্সি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক স্টিভেন সাইমন একটি অনলাইন পরিবেশনায় বলেন ইরানের অনেক অজ্ঞাত “ প্রতিরোধ করার অক্ষশক্তি ” রয়েছে। সাইমন প্রশ্ন করেন, “ ইরানের নিজেদের কথা না হয় বাদই দিলাম লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের অক্ষশক্তির কতখানি অবশিষ্ট আছে”।
সাইমন বলেন, “ হামাসকে মূলত একটি সামরিক সংগঠন হিসেবে ধ্বংস করা হয়েছে। হেজবুল্লাহ মারাত্মক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত। তারা খুব গুরুতর আঘাতের সম্মুখীন হয়: পেজার আক্রান্ত হয়েছে, নাসরাল্লাহ এবং (হেজবুল্লাহ কর্মকর্তা হাশেম)সাফিইয়েদ্দিন এবং তাদের পরমপরায় অন্যান্যদের হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “ হেজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট গুদামে ইসরায়েলের আক্রমণে ক্ষতির ব্যাপরে ইসরায়েলের সর্বসাম্প্রতিক মূল্যায়ন ঠিক কতটা ঠিক, তা আমি জানিনা” তবে “তারা এখন বলছে যে ইসরায়েলি বিমান আক্রমণে ওই সব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৮০% হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে নয়তো অকেজো হয়ে গেছে”।
সাইমন আরও বলেন যে হেজবুল্লাহ ইরান থেকে পাওয়া তার অস্ত্রের সরবরাহ আবার পুষিয়ে ফেলতে অসুবিধার সম্মুখীন হবে কারণ অস্ত্র বিতরণকারী হিসেবে সিরিয়া এটা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয় যে অস্ত্রশস্ত্র তার সীমান্ত দিয়ে লেবাননে প্রবেশ করতে পারবে কীনা।
কার্নেগির গ্রাজুয়েস্কি বলেন তিনি মনে করেন ইরানের পক্ষের নেটওয়ার্ক দূর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং এখন যখন তার নিজের “ ক্ষেপণাস্ত্রের মওজুদ সীমিত হয়েছে এবং এগুলির সক্ষমতা প্রশ্নসাপেক্ষ হয়ে উঠেছে” তখন ইরানের পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্পগুলি এখন “ মারাত্মকভাবে কমে এসেছে।