সিলেট অঞ্চলে এনটিসির চা বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি নিয়ে আন্দোলন

বকেয়া মজুরির দাবীতে সরকারি মালিকানাধীন এনটিসির চা বাগানের শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ফটোঃ ২৭ অক্টোবর, ২০২৪।

বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগানের শ্রমিকরা বুধবারের মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করা হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

রবিবার (২৭ অক্টোবর) লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেট আম্বরখানা এলাকায় ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকরা দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করেন। এতে ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।

পরে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। দুই দিনের মধ্যে বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা।

আগামী দু’দিন, অর্থাৎ ২৮ এবং ২৯ অক্টোবর কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান শ্রমিকরা।

ছয় সপ্তাহ মজুরি বকেয়া

জানা যায়, ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না সরকারের ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগানের শ্রমিকরা। বকেয়া মজুরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।

আন্দোলনের কারণে ৭ দিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগান।

গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির সব পরিচালক পদত্যাগ করেন। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে পড়ে কোম্পানির সব বাগানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও মজুরি।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে শ্রমিকরা। মাত্র ১৭৮ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বকেয়া মজুরির দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন এনটিসির মালিকানাধীন বাগানগুলোর শ্রমিকরা। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে একযোগে আন্দোলন করছেন তারা।

সিলেটে এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলো হলো- লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগান। দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে এনটিসির ১৮টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।

এই সবগুলো বাগানেই আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত দুর্গাপূজার আগ থেকেই তাদের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পূজার সময়ে বোনাস প্রদান করলেও দেড় মাসের মজুরি বকেয়া রয়ে গেছে।

সরকারের পতন, কোম্পানি অচল

শ্রমিক সজিব মুন্ডা বলেন, “যে টাকা মজুরি পাই, তাদিয়ে সংসারই চলে না। কোনরকমে চালাতে হয়। এরমধ্যে দেড় মাস ধরে মজুরি বন্ধ। আমরা বাঁচব কী করে? দোকানে বাকির টাকার অংশ বেকল বড় হচ্ছে। এখন দোকানদারও বাকি দিতে চায় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।”

লাক্কাতুরা বাগানের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, আন্দোলনের শুরুতে প্রথমে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসরকর কাছে বকেয়া মজুরির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল।

রবিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি নিজেও এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক।

রাজু বলেন, “আমাদের দেড় মাসের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। মজুরি না পেয়ে লক্ষাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কে সরকারে আসল বা গেল তা নিয়ে নিরীহ চা শ্রমিকদের কিছু আসে যায় না। আমরা কোনো রাজনীতিতে নেই। আমরা কেবল আমাদের মজুরি চাই।”

এ ব্যাপারে লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহিদ বলেন, “শ্রমকিদের মত আমরা নিজেরাও সমস্যায় আছি। আমাদেরও বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তবে শুনেছি শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

ন্যাশনাল টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক বলেন, কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। “আশা করছি, দুই থেকে একদিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে,” তিনি বলেন।