গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২২ নিহত, তেল আভিভের কাছে ট্রাক 'আক্রমণে' নিহত ১

তেল আভিভের কাছে একটি ব্যাস স্টপে এই ট্রাক সজোরে ধাক্কা দিলে অন্তত একজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়। ফটোঃ ২৭ অক্টোবর, ২০২৪।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা রবিবার বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু। গাজার উত্তরাঞ্চল ইসরায়েলের আক্রমণে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো সেখানকার অবস্থাকে একটি মানবিক বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছে। ইসরায়েল বলে, তারা বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।

ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম রেসকিউ সার্ভিসের মতে, একটি পৃথক ঘটনায়, ইসরায়েলের শহর তেল আবিবের কাছে একটি ট্রাক একটি বাস স্টপে উঠে গেলে একজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট ছিল না। ঘটনাটি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরের কাছে ঘটে।

রেসকিউ সার্ভিস একটি বভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় একটি বড় ট্রাক একটি বাসকে সজোরে ধাক্কা দিচ্ছে। মোসাদের সদর দপ্তরের কাছাকাছি থাকা এই বাস স্টপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের সংযোগস্থলের কাছেও অবস্থিত, এবং এই ঘটনাটি ঘটে যখন ইসরায়েলিরা সপ্তাহব্যাপী ছুটির পর কাজে ফিরছিল।

ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র আসি আহারনি ইসরায়েলি সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম কানকে বলেন, "আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা হয়েছে।" এটি ইঙ্গিত করে যে পুলিশ ঘটনাটিকে আক্রমণ হিসাবে বিবেচনা করছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থামানো হয়েছে নাকি হত্যা করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

গাজা সিটির এক আশ্রয় কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলার পর ফিলিস্তিনিরা ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করছে। ফটোঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

'ভয়াবহ পরিস্থিতি'

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার রাতে গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া শহরে কয়েকটি বাড়ি এবং ভবনে হামলায় নিহত ২২ জনের মধ্যে ১১ জন নারী এবং দুই শিশু ছিল। এ ঘটনায় আরও ১৫ জন আহত হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে। নিহতদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই তিনটি পরিবারের সদস্য।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে, তারা বেইত লাহিয়ায় একটি ভবনে অবস্থানরত বিদ্রোহীদের উপর সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে এবং বেসামরিক মানুষদের ক্ষতি এড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা বলে "গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যা" সম্পর্কে তাদের আপত্তি রয়েছে, তবে তারা নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা বা প্রমাণ দেয়নি।

ইসরায়েল ৬ অক্টোবর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বিমান ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে সেখানে হামাস জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হয়েছে। শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি বছরব্যাপী এই যুদ্ধের সর্বশেষ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় গাজা শহরে পালিয়ে এসেছে।

ত্রাণ সংস্থাগুলি গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছে। এই অঞ্চলটি ইসরায়েলের স্থল হামলার প্রথম লক্ষ্য ছিল এবং ইতিমধ্যেই যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। ইসরায়েল সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে মৌলিক মানবিক সহায়তার প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উত্তরে অবশিষ্ট তিনটি হাসপাতাল জানিয়েছে যে আহত মানুষদের ঢলে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনটি হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি গত সপ্তাহের শেষে হামলার শিকার হয়।

শনিবার রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি বলে, উত্তরে ইসরায়েলের চলমান উচ্ছেদ আদেশ এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা বেসামরিক জনগণকে "ভয়াবহ পরিস্থিতিতে" ফেলেছে।

তারা বলে, "অনেক বেসামরিক মানুষ বর্তমানে চলাফেরা করতে অক্ষম, যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ বা শারীরিক বাধার কারণে আটকা পড়েছেন এবং এখন প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছেন না।"

যুদ্ধটি শুরু হয় যখন হামাসের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর একটি আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে। তারা প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক ছিল এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে। প্রায় ১০০ জন জিম্মি এখনও গাজার অভ্যন্তরে রয়েছে, যাদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মৃত বলে ধারণা করা হয়।

স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে ৪২,০০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মন্ত্রণালয়টি তাদের গণনায় বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে তারা বলে নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল কোনও প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে তারা ১৭,০০০-এর বেশি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

যুদ্ধে দরিদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং ২৩ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশকেই বারবার বাস্তুচ্যুত করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকূল বরাবর অস্বাস্থ্যকর ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে যে সেখানে ব্যাপকভাবে খাদ্য সংকট বিরাজ করছে।