ড. ইউনূসের হার্টের সমস্যা আছে কিনা, এ ব্যাপারে কিছুই অবগত নয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ড. ইউনূস হৃদরোগে আক্রান্ত কিনা সেটা তারা জানেন না।

এ সপ্তাহে বিদেশী কয়েকটি গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের হার্টের গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হতে পারে। এই জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে বেড রিজার্ভ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে চিকিৎসক দল।

কিন্তু বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেননি। ড. ইউনূস হৃদরোগে আক্রান্ত কিনা সেটাও তারা অবগত নন।

প্রধান উপদেষ্টার হার্টের সমস্যা আছে কিনা এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. ইউনূসের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মো. মোস্তফা কামাল বলেন, "আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। আমাদের সঙ্গে উনার কোনো যোগাযোগ হয়নি।"

ড. ইউনূসের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক টিমে তিনজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়েছে- বিদেশী গণমাধ্যমের রিপোর্টের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোস্তফা বলেন, "আমাদের মেডিকেল বোর্ডের কোনো চিকিৎসক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নয়। এখানে যেটা ভুল হচ্ছে, সেটা হলো কার্ডিয়াক এ্যানেসথেসিয়া। উনার সবাই এ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক। আইসিইউ, জেনারেল আইসিইউ, সার্জিকাল আইসিইউ- এইসবগুলো আমাদের এ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয়।"

ভয়েস অফ আমেরিকার হাতে আসা মেডিকেল বোর্ডের চিঠিতে বলা হয়েছে- প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আইসিইউ-২ এবং ২১ নম্বর বেড সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি রাত্রিকালীন চিকিৎসার জন্য সাত জন চিকিৎসকের টিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বলেন, “একদম লাস্ট অবস্থায় রোগিকে সব সময় আইসিইউতে আনা হয়, এটা ঠিক নয়। দেখা গেলো যে হঠাৎ করে একটা দুর্ঘটনা হলো, তখন অনেক রোগিকে আমরা আইসিইউতে নিয়ে আসি। কিছুক্ষন রেখে কিংবা একদিন রেখে ভালো হলে চলে যেতে পারে। কিংবা নরমাল বেডে চিকিৎসা নিতে পারে।”

“ভিআইপিদের জন্য সবসময় আইসিইউ বরাদ্দ করে রাখি। সেটাতে সাধারণত ভিআইপি বা এই ধরণের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি” বলে যোগ করেন অধ্যাপক মোস্তফা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মেডিকেল বোর্ড পূর্বের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির অংশঃ বিএসএমএমইউ হাসপাতাল

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নয়, পূর্বের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল মেডিকেল বোর্ড করেছে।

নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে বিএসএমএমইউতে এমন মেডিকেল বোর্ড গঠন হয়ে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকার প্রধান আসলেও তাদের জরুরি চিকিৎসায় বড় হাসপাতাল হিসেবে বিএসএমএমইউতে মেডিকেল বোর্ড গঠন ও চিকিৎসার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়।

এমাসের গোড়ার দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফরের সময়েও তাদের জরুরি চিকিৎসার প্রস্তুতি ছিল বলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য জানান।

ড. ইউনূসের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক মোস্তফা বলেন, “সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির জন্য আমরা রুটিন প্রসেসের অংশ হিসেবে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রাখি। জরুরি অবস্থার জন্য কেবিন ও আইসিইউ বেড রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের জন্য একটা মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। এটা অন্য কিছুই না।”

তিনি জানান, “একটা মেডিকেল বোর্ড হয় সবগুলো বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে। আরেকটা আমরা আইসিইউ বিভাগ করে থাকি। ভিআইপির জন্য বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে এই টিম কাজ করে।"

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান জানান প্রধান উপদেষ্টার চিকিৎসার জন্য সব বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে আরেকটি মেডিকেল বোর্ডের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। "তবে, এটি চূড়ান্ত হতে আর ২-১ দিন সময় লাগবে," বলে তিনি যোগ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বাসভবন বিএসএসএমইউ হাসপাতালের একদম পাশে হওয়ায় একটু বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে মেডিকেল বোর্ডগুলো গঠন করতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন হাসপাতালের এই উপাচার্য।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তারও মেডিকেল বোর্ড ছিলঃ চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব

ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার জানান খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তারও মেডিকেল বোর্ড ছিল।

এ বি এম আব্দুস সাত্তার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ''সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের মেডিকেল বোর্ড সব সময় থাকে। এটা নিয়মেই আছে। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সরকার প্রধান থাকাকালেও ছিল।"

শেখ হাসিনা জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড ছিল বলে মনে পড়ে নাঃ ডা. আব্দুল্লাহ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। এই অধ্যাপক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এই রকম মেডিকেল বোর্ড ছিল বলে আমার মনে পড়ে না।”

তবে, দেশের বড় হাসপাতালগুলোতে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য মেডিকল বোর্ড হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য বিএসএমএমইউতে কোনো মেডিকেল বোর্ড ছিল না বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সায়েদুর রহমান বলেন, "উনি একদম 'মিথ্যা কথা' বলছেন। সব সরকার প্রধানের জন্য মেডিকেল বোর্ড হয়ে আসছে।"

শেখ হাসিনার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কে ছিলেন জানতে চাইলে সায়েদুর রহমান বলেন, "আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি, কিছুদিন আগে এসেছি। তাই ওই মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কে ছিল আমার জানা নেই।"

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তিনি খুব ভালো আছেন, প্রতিদিনই কাজ করছেনঃ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‍''বাংলাদেশের যে কোনো সরকার প্রধানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক থাকেন, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের যিনি সরকার প্রধান হন, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক থাকেন। ড. ইউনূস স্যারের চিকিৎসক আছেন।''

''সরকার প্রধান সুস্থ থাকুক, বা অসুস্থ থাকুক সব একটা মেডিকেল বোর্ড থাকে" বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

ড. ইউনূস শারীরিকভাবে একদম সুস্থ আছেন বলেও জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, "তিনি খুব ভালো আছেন। প্রতিদিনই কাজ করছেন।"