শিক্ষার্থী নয়, অটোপাশ দাবিকারীদের চাপে আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছিঃ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ২০ অক্টোবর, ২০২৪।

এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে অকৃতকার্য একদল শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। সোমবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

২০ অক্টোবর রাতে তপন কুমার সরকার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ''‌‍‌এরা কেউ শিক্ষার্থী না, তাদেরকে শিক্ষার্থী বলবেন না। এরা অটোপাশ দাবিকারী। তাদের দাবি ও বিক্ষোভ এবং ভাঙচুরের কারণে আমি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।''

সোমবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিজের পদত্যাগ পত্র জমা দেবেন বলেও জানান তপন কুমার।

তিনি বলেন, ''যারা অটো পাসের দাবিতে এসেছিল তারা আমার বোর্ড অফিস অবরুদ্ধ করে, আমাদের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করছে। তাদের দাবি ছিল, অটোপাশ দিতে হবে। আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। তখন আমি বললাম, অটোপাশ দেওয়ার মালিক আমি না। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আর পদত্যাগ পত্র কালকে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো।''

জানা গেছে, শনিবার থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কয়েক শ শিক্ষার্থী এসএসসির সব বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে ‌বৈষম্যহীনভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দাবিতে শিক্ষাবোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিল। রবিবারও ওইসব শিক্ষার্থীর একই দাবিতে বিক্ষোভ করে; এক পর্যায়ে তারা শিক্ষাবোর্ডের ভেতরে ঢুকে পড়ে। চেয়ারম্যানের কক্ষে ভাঙচুর করে। তখন সেখানে উপস্থিত বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয়, এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, রাত ৯ টায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে দাবি জানায় যে, রবিবার রাতের মধ্যে ম্যাপিং পদ্ধতিতে তাদের অটোপাশ দেওয়া এবং চেয়ারম্যানের পদত্যাগের। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পদত্যাগের ঘোষণা দিলে ধীরে-ধীরে শিক্ষার্থীদের বোর্ড চত্বর ত্যাগ করতে দেখা যায়।

ঢাকার একটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক আবু মুসা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ''এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করা ২-৩ শতাধিক শিক্ষার্থী গত ২ দিন ধরে এসএসসির ফলাফলের সঙ্গ ম্যাপিং ও বৈষম্যহীন ফলাফলের দাবিতে শিক্ষাবোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিল। কিন্তু আজকে দুপুরে দিকে শিক্ষার্থী বোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। পাশাপশি বোর্ড চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে। যার প্রেক্ষিতে রাতে বোর্ড চেয়ারম্যান পদত্যাগের ঘোষণা দেয়।''

চলতি বছরের ৩০ জুন এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন সরকার কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে। পরে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শিক্ষার্থীরা বাকি স্থগিত হওয়া ছয়টি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানায়। একপর্যায়ে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২০ অগাস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থীরা। তখন স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষার মূল্যায়ন হয় পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। অর্থাৎ এসএসসিতে যে শিক্ষার্থী যত নম্বর পেয়েছিলেন, সেটা এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তর পত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়। এ দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছিল।

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।

এবছর পাসের হার কিছুটা কমেছে। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ যা এ বছর ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি নেওয়া হয়েছে।)