জীব-বৈচিত্র বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছানোর দু বছর পর আগামি সপ্তাহে দেশগুলো আবার মিলিত হবে এবং নির্ধারণ করবে যে তারা এই পৃথিবীর গাছপালা ও প্রাণীকে রক্ষা করার এই প্রচেষ্টায় অগ্রগতি করছে কী না।
জাতিসংঘের জীব-বৈচিত্র বিষয়ক সম্মেলনে ১৯৬ টি রাষ্ট্র স্বাক্ষর দিয়েছিল যাতে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০% ভূমি ও জলকে রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়। এই চুক্তিটিকে ৩০ বাই ৩০ চুক্তিও বলা হয়। যখন চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয় তখন ১৭% স্থল এলাকা ও ১০% সামুদ্রিক এলাকা সুরক্ষিত ছিল – তাতে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিওপি১৬ নামের এই সম্মেলনের আগামি অধিবেশনে দেশগুলি তাদের লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে এবং আশা করা হচ্ছে যে সেগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উপায় সম্পর্কে সম্মত হবে।
কলোম্বিয়ার ক্যালিতে দু সপ্তাহব্যাপী এই বৈঠকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য কোটি কোটি ডলার সংগ্রহের প্রচেষ্টার উপরও আলোকপাত করা হবে। আগামি বছর নাগাদ উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ২ কোটি ডলার প্রদান করা হবে। খাদ্যের অপচয় কমিয়ে আনা এবং সংক্রমণশীল প্রজাতিগুলির প্রচলন বন্ধ করা এর লক্ষ্য।
অগ্রগতির লক্ষণ পাওয়া কঠিন
এই সম্মেলনের আগে প্রায় ২০০ টি দেশের জাতীয় পরিকল্পনা পেশ করার কথা যাতে দেখাতে হবে যে ৩০ বাই ৩০ ‘এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা কি রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু এ সপ্তাহ নাগাদ , প্রায় ৪৬% শতাংশ দেশ তাদের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে এবং ১৫% ‘র ও কম রাষ্ট্র এই লক্ষ্য অর্জনে তাদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এখনও তাদের লক্ষ্যের কথা জানায়নি এবং ভারত তাদের জাতীয় পরিকল্পনা জমা দেয়নি। ব্রাজিল, যেখানে অ্যামাজন এলাকার অধিকাংশ রেইনফরেস্ট রয়েছে , তারা তাদের লক্ষ্য কিংবা পরিকল্পনা কোনটার কথাই জানায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র জীব-বৈচিত্র সম্মেলনের অংশীদার নয় এবং তাকে কোন পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে না। তবে বাইডেন প্রশাসন ২০৩০ সাল নাগাদ আমেরিকার ভূমি ও জলীয় এলাকার এক-তৃতীয়াংশ রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আশা করা হচ্ছে কিছু দেশ এই সম্মেলনে সুরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি কিংবা সম্প্রসারিত করার ব্যাপারে এবং কি ভাবে তারা জীব-বৈচিত্র বিষয়ক অর্থায়নে খরচ করবে সে সম্পর্কে তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করবে। উদাহরণস্বরূপ কানাডা চারটি স্বদেশজাত প্রকল্পের জন্য ৮০ কোটি ডলার খরচ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সুরক্ষা গোষ্ঠীগুলি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন যে আরও অনেক দেশ তাদের জীব-বৈচিত্রের লক্ষ্য অর্জন এবং তা কি ভাবে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড বা ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক অ্যাডভোক্যাসির প্রধান বার্নাডেট ফিশলর হুপার এই প্রতিশ্রুতিকে এ নাগাদ “ হতাশাব্যঞ্জক” বলে অভিহিত করেছেন। ডব্লিউডব্লিউএফ যারা এ ব্যাপারে অগ্রগতিকে চিহ্নিত করছে, তারা দেখেছে যে কোন কোন পরিকল্পনায় জীববৈচিত্র হারানো বন্ধ করতে বাস্তব ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এবং সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতাপূর্ণ অর্থায়নেরও অভাব রয়েছে।
হুপার বলেন, “কোন কোন দেশ আছে যারা সহজেই তাদের পরিকল্পনা হাল নাগাদ করতে পারে । কেন তারা সেটা করেনি, তার কোন কারণ দেখি না। আবার এমন কিছু দেশও আছে যারা যে ধরণের সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন তা পায়নি”।
এই কনভেনশনের সচিবালয় দেখেছে যে ৯১টি দেশ তাদের লক্ষ্য জানিয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশির লক্ষ্য ছিল তাদের নিজেদের স্থল এলাকার অন্তত ৩০% সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত করার এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশের লক্ষ্য ছিল ৫% থেকে ৩০% সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত করার। উপকুলীয় ও জলীয় অঞ্চলের জন্য এক তৃতীয়াংশেরও বেশির জাতীয় লক্ষ্য ছিল ৩০% কিংবা তারও বেশি এবং এক তৃতীয়াংশের লক্ষ্য ছিল ৫% থেকে ৩০%।
তবে কনভেনশন অন বায়োলজিকাল ডাইভার্সিটির নির্বাহী সম্পাদক অ্যাস্টি্রড শোমেকার বলেন স্বল্প সংখ্যক দেশ যে পরিকল্পনা দিয়েছে তাতে অবাক হবার কিছু নেই কারণ সরকারগুলিকে প্রথমে লক্ষ্য স্থির করতে হবে তার পর প্রয়োগের পরিকল্পনা দিতে হবে।
তিনি বলেন, “এগুলো হচ্ছে জটিল প্রক্রিয়া, সেটা রাতারাতি হ্ওয়া সম্ভব নয়”।
এই লক্ষ্য অর্জন বিশেষত পরিযায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে খুব জরুরি । জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা গেছে এদের ৪০% ই কমে আসছে।
পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে পরিযায়ী পাখি বিষয়ে সো্ওল ভিত্তিকএকটি অলাভজনক ইস্ট এশিয়ান-অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে পার্টানারশীপ প্রতিষ্ঠানের প্রধান জেনিফার জর্জ বলেন, “ পাখিরা সংরক্ষিত এলাকার সীমানা চেনে না এবং তারা তাদের খাদ্য ও বসবাসের সুবিধা মতো উড়ে যায়”।
অর্থায়নের অভাব
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আলোচনার মতোই অনেকটা, এই জীব-বৈচিত্র সম্মেলনে বিতর্কের একটি বড় বিষয় হচ্ছে এর অর্থায়ন।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রকল্পগুলির জন্য বিভিন্ন সুত্র থেকে এই জীববৈচিত্রের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ দরিদ্র দেশগুলির প্রয়োজন পড়বে ২০ হাজার কোটি ডলার। ধনী দেশগুলি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলিকে আগামি বছর থেকে দুই হাজার কোটি ডলার প্রদান করতে এবং ক্রমশই তা ২০৩০ সাল নাগাদ তিন হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা সেপ্টেম্বর মাসে জানায় যে জীব বৈচিত্রের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয় কিন্তু যখন এই চুক্তির জন্য অর্থায়নের প্রশ্ন ওঠে তখন দেখা যায় পৃথিবীতে দুই হাজার কোটির লক্ষ্যমাত্রার ২৩% ঘাটতি রয়েছে।
এ বিষয়টির পক্ষে যারা তারা বলছেন এখানে অর্থ খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ জীব বৈচিত্র রক্ষা করার জন্য আফ্রিকার মধ্যকার দেশগুলোর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রয়োজন সব চেয়ে বেশি।
৩০ বাই ৩০ এর চেয়ে বেশি
জীব বৈচিত্রের উপরের দিকের লক্ষ্য ছাড়াও এই সম্মেলনে ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের কারণে কিছু প্রাণী নিঃশেষ হয়ে যাবার হুমকি সম্পর্কে এই চুক্তিতে একটি লক্ষ্য স্থির করার বিষয়েও আলোচনা করা হবে, যাতে করে এই সব প্রাণীর নিশ্চিহ্ন করা ১০ গুণ কমানো যায়। লক্ষ্য হচ্ছে “ স্থানীয় বন্য প্রাণী” ও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করা।
তবে সংরক্ষণবাদীরা বলছেন এই লক্ষ্যগুলি সুনির্দিষ্ট ভাবে দেওয়া নেই এবং আশা করছেন যে এই বৈঠকে এর বিস্তারিত বিষয়টি সম্পর্কে স কলেই সম্মত হবেন।
এই বৈঠকে উদ্ভিদ, পশুপাখী , ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে জেনেটিক বস্তু নিয়ে ডিজিটাল উপাত্ত ভাগ করার সুবিধার বিষয়ে একটি বৈশ্বিক পদ্ধতি নিয়েও বিবেচনা করা হবে। এ গুলি প্রায়শই ওষুধের মতো বানিজ্যিক পণ্য উত্পাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এমনটি আশা করা হচ্ছে যে এই সমঝোতা এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিবে যে লাভের অংশ সমান ভাবে ভাগ করা হবে।