নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ডিসিশন উল্লেখ করে আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) নির্বাচন নিয়ে তার সাম্প্রতিক বক্তব্যের ব্যাখ্য দিয়ে একটি বিবৃতিতে বলেছেন "এটি (নির্বাচনের তারিখ ও সময় ঘোষণার এখতিয়ার তার (প্রধান উপদেষ্টার) একার রয়েছে।"
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. আসিফ বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনপূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হতে পারে।
তিনি বলেছিলেন, "আমি মনে করি, বাস্তবতার নিরিখে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হতে পারে। অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে।"
বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই আয়োজিত 'আজকের পত্রিকা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী নির্বাচনের সময় জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আসিফ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।
এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিবৃতিতে ড. আসিফ বলেন, সেখানে এসব বিষয় পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার সুযোগ তিনি পাননি। তবে সরকারের কথায় সবাই বুঝতে পারবেন, নির্বাচনে সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয় রয়েছে। "এগুলোই ফ্যাক্টর। সংস্কারের কথাও বলেছি।"
তিনি বলেন, সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ে আমি কর্মসূচিতে আরও কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করেছি।
উপদেষ্টা বলেন, এসব বিষয় ঠিক থাকলে আগামী বছর নির্বাচন হতে পারে। "আমি আমার প্রাথমিক অনুমানও বলেছি।"
এসব শর্তসাপেক্ষ ধারণা ও অনুমানকে কোনো গণমাধ্যম নির্বাচনি ঘোষণা হিসেবে উপস্থাপন করছে।
আসিফ নজরুল তার জবাবে বলেন, "সত্যি বলতে, এটা ঠিক নয়।"
শুক্রবার কক্সবাজার সফর শেষে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, "আমরা ভোটিং কালচার নিশ্চিত করতে চাই। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, রাজনৈতিক দলগুলোর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং ভোটার হালনাগাদ কাজ করবে সরকার।
তার পরই আমরা নির্বাচন দেব, যাতে দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। নাজুক একটি পরিস্থিতিতে সরকার কাজ শুরু করেছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। দেশের ভোটিং কালচার নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আমরা ভোটিং কালচার নিশ্চিত করতে চাই।"
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বা আগামী নির্বাচন কবে হবে এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলেও উপদেষ্টা পরিষদ এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস।
২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ডঃ ইউনূস বলেন, "আমরা আলোচনা করেছি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেইনি।"
এর আগে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে দেশে আগামী আঠারো মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে যেন সক্ষম হয়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তার দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাবার কথা জানান বাংলাদেশের সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
সেনা প্রধানের বক্তব্যের সূত্র ধরে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে এ কথা থেকে কি ধরে নেয়া যায় যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে ১৮ মাস, এ প্রশ্নটি করা হলে, জবাবে ইউনূস বলেন, "সেটা আপনি ইচ্ছা করলে ধরতে পারেন। কিন্তু, সরকারের মতামত তো না সেটা। সরকার তো কোনো মত দেয়নি এ পর্যন্ত। কাজেই সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে সেটা সরকারকে বলতে হবে। সরকার না বলা পর্যন্ত সেটা তো সরকারের মেয়াদ হচ্ছে না।"
বিষয়টি পরিষ্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আরো বলেন, "আমাদেরই বলতে হবে। আমাদেরকেই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন তখন সেটাই হবে তারিখ।"
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে এবছরের ৫ অগাস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেওয়া হয়েছে।)