দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের জন্য হাসান মুরাদকে টেস্ট দলে যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সিরিজটি শুরু হবে ২১ অক্টোবর থেকে।
বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ সাকিব আল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
২০২১ সালে অভিষেকের পর প্রথম শ্রেণির ৩০ ম্যাচে ১৩৬ উইকেট নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী মুরাদ।
বিসিবি চেয়ারম্যান ও বিসিবির নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, "আমাদের জানানো হয়েছে প্রথম টেস্টে সাকিব থাকছেন না।"
তিনি বলেন, "সে (সাকিব) তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে, কিন্তু তার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ব্যাট ও বল উভয় ক্ষেত্রেই তার বিকল্প হিসেবে আমাদের এখনও সেই মানের কেউ নেই।"
তিনি আরও বলেন, হাসান মুরাদের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার ইতিহাস ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি স্পিনার হিসাবে ঘরের মাঠে ভাল করতে পারেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের বাংলাদেশ স্কোয়াড:
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস (উইকেট রক্ষক), জাকের আলী, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও হাসান মুরাদ।
সাকিব দেশে ফিরছেন না
টেস্ট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় ফিরছেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এর আগে তিনি তার শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসবেন বলে জানালেও ছাত্র আন্দোলনে তার ভূমিকার জন্য জনরোষের আশঙ্কায় তিনি আসছেন না বলে জানান।
এর ফলে কানপুরে অনুষ্ঠিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজের টেস্টটিই ছিল সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।
কানপুরে সেই ম্যাচের আগে সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। ঢাকায় দেশের দর্শকদের সামনে তাঁর শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু সেই ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
দুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রানজিট স্টপেজে থাকা সাকিব নিজের পরিকল্পনা পরিবর্তনের কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমার দেশে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু এখন নিরাপত্তাজনিত কারণে, নিজের নিরাপত্তার কারণে আমি হয়তো তা করতে পারব না।”
এটা স্পষ্ট যে, সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে চলমান বিক্ষোভের কারণে তিনি তার পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে একদল শিক্ষার্থী। আরেক দল সাকিবকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিসিবিকে চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেলিব্রেটি ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও সাকিব জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন। এর কারণে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
কানপুরে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সময় সাকিব দেশে ফেরার পর নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ঢাকায় অবস্থানকালে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু বোর্ড ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক আসিফ মাহমুদ।
পরে অবশ্য ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, সাকিব দেশে ফিরলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন তারা।
তবে সাকিবের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বুধবার রাতে নিশ্চিত করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সাকিবকে তার দেশে ফেরার পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা-কর্মী এবং সাংবাদিক ও সাহিত্যিকসহ শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই খুনসংক্রান্ত।
ব্যাপক হারে খুনের মামলা এবং তার ভিত্তিতে গ্রেফতার ও পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা নিয়ে আইনজীবী ও সাংবাদিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম ১৬ সেপ্টেম্বর আশ্বাস দেন যে, প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হবে না।